২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত ও চমকের নাম আফগানিস্তান। ব্যাটে-বলে পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই গুণমুগ্ধ করে রেখেছিল রাশিদ খানের দল৷ শুধু কাবুল থেকে কান্দাহার নয়, আফগানদের সাহসী ক্রিকেট নিয়ে পুরো বিশ্ববাসীর কণ্ঠে মুগ্ধতা ঝরেছে।
বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে নিউজিল্যান্ড ও সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের হেভিওয়েট দলকে হারিয়ে দুদণ্ড প্রতাপেই ইতিহাস গড়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে আফগানরা৷ সেমিতে অবশ্য মুখ থুবড়ে পড়ে আফগানদের সাধনা৷ প্রোটিয়াদের কাছে ব্যাটে-বলে রীতিমতো উড়ে যায় রাশিদ খানের দল৷ তবে এতে আক্ষেপের চেয়ে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী।
যে দেশে নেই ক্রিকেটের কোনো সংস্কৃতি কিংবা অবকাঠামো, নেই আন্তর্জাতিক মানের কোনো মাঠ, বরং যুদ্ধতেই কেটেছে একটা প্রজন্মের জীবন। এমন অসংখ্য প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে জীবনযুদ্ধ জয় করে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে নিজ দেশের পতাকাকে উঁচিয়ে ধরা মোটেও সহজ ছিল না আফগানদের জন্য৷
আরও পড়ুন:
» রাওয়ালপিন্ডি’র ঐতিহাসিক জয়ের দিনে মানবিক পরিচয়ে মুশফিক
» নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নতুন সূচি প্রকাশ করলো আইসিসি
আফগানিস্তানে ক্রিকেটের যাত্রাটা শুরু হয় উনিশ শতকের শুরুর দিকে৷ অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশদের মাধ্যমে আফগানিস্তানে ক্রিকেটের প্রচলন হয়৷ তবে ব্রিটিশদের সময়ে সমাজের এলিট শ্রেণি ক্রিকেটের সাথে সম্পর্ক গড়লেও সাধারণ মানুষ ছিল ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে৷
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় আফগানিস্তানের বহু মানুষ পাকিস্তানে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়৷ সেসময় পাকিস্তানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল ক্রিকেট৷ আফগানরাও তখন ক্রিকেটে বুঁদ হয়৷ ১৯৯৫ সালে সেখানেই গড়ে উঠে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড৷
পাঁচ বছর পর ২০০১ সালে গঠিত হয় আফগানিস্তানের জাতীয় দল৷ একই বছর আইসিসির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায় দলটি৷ এরপর পাকিস্তান থেকে শরণার্থীরা ফিরে আসে নিজেদের মাতৃভূমি। পর্যাপ্ত মাঠ, অবকাঠামো কিংবা নানা মানবিক সংকটে ভুগতে থাকা দেশটিতে ক্রিকেট চর্চা ও জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে।
আরও পড়ুন:
» রাওয়ালপিন্ডিতে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর প্রশংসার আসনে বাংলাদেশ
» ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ
২০০৮ সালেও আইসিসির পঞ্চম ডিভিশনে খেলা দলটি একের পর এক সিঁড়ি বেয়ে ক্রিকেটাঙ্গনে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিত শুরু করে৷ ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে আইসিসির কোনো বৈশ্বিক আসরে প্রথম নাম লেখায় আফগানিস্তান৷
ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানিস্তান খেলতে না পারলেও ততদিনে ওয়ানডে মর্যাদা পেয়ে যায় দলটি। আফগানিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি মোহাম্মদ নবির নেতৃত্বে ২০১৫ সালের অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে আফগানরা৷ ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে মাত্র দুই বছর পর ২০১৭ সালে আইসিসির টেস্ট মর্যাদা লাভ করে আফগানরা৷
২০১৮ সালে নিজেদের অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে হারলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছে দলটির৷ সীমিত ওভারের ক্রিকেটের পাশাপাশি টেস্ট ক্রিকেটেও মন্দ নয় আফগানরা৷ এখন পর্যন্ত ৯ টেস্টে তাদের জয় রয়েছে তিনটিতে৷
যুদ্ধের মধ্যে বেড়ে উঠা কিংবা যুদ্ধের তেজ বয়ে বেড়ানো আফগান জাতি ক্রিকেটেও নিংড়ে দিচ্ছে নিজেদের সর্বস্বটা৷ বৈশ্বিক আসরে কিংবা দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ম্যাচের শুরু থেকেই হার না মানা মানসিকতা ও সাহসী ক্রিকেট খেলাতেই ফুঁটে ওঠে যুদ্ধ জয় করা জাতির প্রতিচ্ছবি৷
ক্রিফোস্পোর্টস/২৮আগস্ট২৪/টিএইচ/বিটি