‘ডাই মিস্টার! ডাই বেস্টেন! লেস গ্র্যান্ডেস ইকুইপস! চ্যাম্পিয়নস!- –ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বড্ড এক চেনা শ্লোক। যা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মাঠের ফুটবলে যোগ করে উত্তেজনার বাড়তি পারদ। জিনেদিন জিদানের ভাষায় যা ‘যাদু’। উয়েফার ইউটিউব চ্যানেলে একবার বলেছিলেন, ‘ম্যাজিক… এটা সব কিছুর উপরে যাদু। আপনি যখন গানটি শুনবেন তখনই তা আপনাকে বিমোহিত করবে।’
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সংগীত ‘দ্যা চ্যাম্পিয়ন’ নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছিল ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগ’ নামকরণের সময়। ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নাম ছিল ‘ইউরোপিয়ান কাপ’। কিন্তু ১৯৯১ সালে এসে উয়েফা তথা ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা টুর্নামেন্টটির আপাদমস্তক বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। বদলানোর সিদ্ধান্ত শুরু হয় নাম পরিবর্তন, লোগো আর সঙ্গীত দিয়ে। এমন সঙ্গীত যার সুরে টেনে আনবে হাজার মাইল দূরের ফুটবলপ্রেমীকেও। খোঁজ শুরু হয় এমনই এক সঙ্গীত স্রষ্টার।
উয়েফার খোঁজে পাওয়া যায় এক ব্রিটিশ মিউজিক কম্পোজারকে। নাম টনি ব্রিটেন। ভদ্রলোক গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন লন্ডনের রয়্যাল মিউজিক কলেজ থেকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সঙ্গীতের থিম কেমন হবে তা নিয়ে তখন ভাবতে শুরু করেন টনি। থিমের রেফারেন্স হিসেবে তিনি আমলে নেন জর্জ ফ্রেডরিক হ্যান্ডেলের ‘জ্যাডক দ্য প্রিস্ট’ থিমকে। যেটির সাথে রয়েছে যুক্তরাজ্যের রাজ পরিবারের অদ্ভুত মিল।
সুরটির জন্ম হয় অষ্টাদশ শতকে। ১৭২৭ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় জর্জের রাজ্য অভিষেকের সময় লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে প্রথম এই সুর বাজানো হয়। ১৯৫৩ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যভিষেকেও পরিবেশিত হয় একই সুর। সর্বশেষ ২০২৩ সালে রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকে আবারও বাজানো হয় সেই চিরচেনা সুর।
যদিও তখন সুরটির কোনো লিরিক্স ছিল না। ১৯৯২ সালে এসে এই সুরের পূর্ণতা দেন টনি ব্রিটেন। সুরের সঙ্গে মিল রেখে তিনি লিখেন ফেলেন লিরিক, যা স্থান করে নেয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সঙ্গীত হিসেবে৷ উয়েফার অফিশিয়াল ভাষা তথা জার্মান, ইংলিশ ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় লেখা হয় গানটি। লন্ডনের রয়্যাল ফিলাহার্মোনিক অর্কেস্ট্রায় একাডেমি অব সেন্ট মার্টিন ইন দ্য ফিল্ডস–এর কোরাস দল প্রথম গানটি রেকর্ড করেন।
তিন মিনিটের এই গানে রয়েছে দুটি ছোট শ্লোক ও একটি কোরাস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচগুলোতে দুই দলের মাঠে প্রবেশের সময় গানের কিছু অংশ বাজানো হয়। কিন্তু পুরোটা কেবল শোনা যায় টুর্নামেন্টের ফাইনালে। ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এই গানের মাহাত্ম্য ভিন্ন রকমের। ইউরোপজুড়ে আরো অসংখ্য ম্যাচের মধ্যে কেবল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ মানেই এক আলাদা উত্তেজনা, আলাদা ভালো লাগা। মাঠের ফুটবলে দুই দলের ধ্রুপদী লড়াইয়ের উত্তেজনায় এই গান যোগ করে আরো বেশি স্বাদ।
আরও পড়ুন: চেলসিকে আবেগঘন বিদায় জানালেন থিয়াগো সিলভা
ক্রিফোস্পোর্টস/১মে২৪/এসএ/এজে