ইউরোপিয়ান লীগ ফুটবলের ছুটির ফাঁকে আফ্রিকায় বইছে ফুটবলের বসন্ত বাতাস৷ আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টের ৫টি শহরে ২৪ দলের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে ‘আফ্রিকার বিশ্বকাপ’ খ্যাত আফ্রিকান কাপ অব নেশন্স। এরই মধ্যে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে গিনি-বিসাও’র বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে স্বাগতিক আইভরি কোস্ট৷ রাজধানী আবিদজানের আলসানা কুয়াত্তারা স্টেডিয়ামে গিনি বিসাওকে ২-০ গোলে হারিয়ে আফ্রিকার ফুটবল বসন্তের শুভ সূচনা করেছে দ্যা এলিপেন্টসরা৷ দলটির পক্ষে একটি গোল করেন সৌদি ক্লাব আল-নাসেরের মিডফিল্ডার সেকো ফোফানা এবং অন্যটি করেন সার্বিয়ান ক্লাব রেডস্টার বেলগ্রেড স্ট্রাইকার জেন ক্রাসো।
বসন্তের শুরু যখন
১৯৫৭ সালে সুদানে প্রথম শুরু হয় আফ্রিকান ফুটবল বসন্ত৷ রাজধানী খার্তুমে ৪ দলের অংশগ্রহনে শুরু হয় এ টুর্নামেন্ট। ফাইনালে ইথিওপিয়াকে ৪-০ গোলে হারিয়ে অভিষেক টুর্নামেন্টটির চ্যাম্পিয়ন হয় মিসর৷ অবশ্য শুরুতে কাপ অব নেশন্স নামে কিছুই ছিল না। আফ্রিকার ফুটবল ফেডারেশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট আব্দেল আজিজ আব্দুল্লাহ সালেমের সম্মানার্থে তখন ট্রফির নাম ছিল ‘আব্দেল আজিজ আবদুল্লাহ সালেম ট্রফি’।
এরপর ১৯৬৩, ১৯৬৫ ও ১৯৭৮ সালে ঘানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হলে চিরদিনের জন্য ‘আব্দেল আজিজ আবদুল্লাহ সালেম ট্রফি’ নিজেদের করে নেয় ঘানা৷
১৯৭৮ থেকে ‘আফ্রিকান ইউনিটি কাপ’ নামে টুর্নামেন্টটি চলতে থাকে আরো ২২ বছর৷ ২০০০ সালে ঘানা ও নাইজেরিয়াতে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে নাইজেরিয়াকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে তৃতীয় বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে ক্যামেরুন৷ ফলে ‘আফ্রিকান ইউনিটি কাপ’ চিরদিনের জন্য ট্রফি শোকেসে সাজিয়ে রাখে ক্যামেরুন৷
২০০২ সালে মালিতে অনুষ্ঠিত এবার টুর্নামেন্টের নাম হয় ‘আফ্রিকা কাপ অব নেশন্স’। সেই থেকে প্রতি ২ বছর পরপর আজও টুর্নামেন্টটি এ নামে পরিচিত৷ টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দল মোহাম্মদ সালাহর মিসর৷ সর্বোচ্চ ৭বার চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি৷ এর মধ্যে ২০০৬, ২০০৮ ও ২০১০ সালে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয় তারা৷ টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ট্রফি ঘরে তোলে ক্যামেরুন৷ ৫ বার শিরোপা ঘরে তোলে তারা।
চলতি আসরে কোন গ্রুপে কারা
আইভরি কোষ্টের ৫টি শহরের ৬ ভেন্যুতে ২৪ দলের অংশগ্রহনে বসেছে টুর্নামেন্টের ৩৪তম আসর৷
গ্রুপ-এ– আইভরি কোস্ট, নাইজেরিয়া, ইকোয়েটোরিয়াল গিনি এবং গিনি বিসাও।
গ্রুপ-বি– মিসর, ঘানা, কেপভার্দে এবং মোজাম্বিক।
গ্রুপ-সি– সেনেগাল, ক্যামেরুন, গিনি এবং গাম্বিয়া৷
গ্রুপ-ডি– আলজেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, মৌরাতানিয়া এবং এঙ্গোলা।
গ্রুপ-ই– তিওনিশিয়া, মালি, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়া।
গ্রুপ এফ– মরক্কো, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, জাম্বিয়া এবং তাঞ্জানিয়া।
সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট মরক্কোকে শিরোপার দৌঁড়ে এগিয়ে রাখছেন অনেকেই। ইউরোপের শীর্ষ লীগে খেলা আশরাফ হাকিমি, ইউসেফ-আন-নেসেরি, সোফিয়ান আম্রাবাতদের দিয়ে গড়া মরক্কো বর্তমানে রয়েছে দারুণ ছন্দে৷ ১৯৭৬ সালে তাঁরা প্রথম বারের মতো এ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে ৪৩ বছরের শিরোপা খরা এবার কাটাতে চাইবে দ্যা আটল্যাস লায়ন্সরা৷
শক্তিমত্তার দিক থেকে পিছিয়ে নেই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দল মিসর। আরো একবার শিরোপা জিতে নিজেদের ট্রফি ক্যাবিনেট ভারি করতে চাইবে দলটি৷ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন সেনেগালও নিজেদের শিরোপা টিকিয়ে রাখতে চাইবে আরো একবার৷
যেভাবে গড়াবে শেষ-১৬
গ্রুপ পর্বের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলগুলো সরাসরি চলে যাবে শেষ ষোলোতে৷ অন্যদিকে গ্রুপ পর্বের তৃতীয় অবস্থানে থাকা সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী বাকি ৪টি দল পাবে শেষ ষোলোতে খেলার টিকিট। এরপর ৮ দলের অংশগ্রহণে কোয়ার্টার ফাইনাল ও ক্রমান্বয়ে সেমিফাইনাল, ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে৷
আরও পড়ুন: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ: একনজরে পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি
ক্রিফোস্পোর্টস/১৪জানুয়ারি২৪/টিএইচ/এমটি