বছরটা অস্ট্রেলিয়ার কাছে দেয়ালে বাঁধাই করার মতো। বছর জুড়ে মাঠের ক্রিকেটে একের পর এক সাফল্য পেয়েছে দলটি৷ অ্যাশেজ, টেস্ট চ্যাম্পয়নশিপ, বিশ্বকাপের পর এবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও গেল অজিদের ঘরে৷ বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো ভারতকে এবারও হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর পর আবারও শিরোপা জিতলো অস্ট্রেলিয়া। সবমিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ট্রফি ক্যাবিনেটে এখন জমা হয়েছে চারটি শিরোপা।
টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠত্ব অজিদের দখলে গেলেও টুর্নামেন্টজুড়ে অন্যান্য দলের খেলোয়াড়রাও আলো ছড়িয়েছেন। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ একাধিক দেশের খেলোয়াড়েরা ভবিষ্যতে হতে পারেন নিজ দলের ভরসার নাম।
একনজরে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের তারকারা
হ্যারি ডিক্সন (অস্ট্রেলিয়া)
মিডল অর্ডারে অজি ব্যাটিং লাইনের ভরসার নাম ছিল ডিক্সন৷ টুর্নামেন্টের সেরা পাঁচ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ডিক্সন থাকলেও তাঁর নেই কোনো শতক৷ তবে ব্যাট হাতে ডিক্সন ৭ ম্যাচে ৪৪.১৪ গড়ে রান করেছেন ৩০৯। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে চাপের মূহুর্তে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনে একমাত্র প্রান্তবন্ত ছিলেন হ্যারি ডিক্সন৷
লুহান-ড্রি প্রিটোরিয়াস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
গোটা টুর্নামেন্টে আক্রমণাত্মক ওপেনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন লুহান প্রিটোরিয়াস। দক্ষতা ও সতর্কতার সাথে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট চালাতে পটু তিনি। টুর্নামেন্টজুড়ে তিনি ব্যাট করেছেন প্রায় একশো ছুঁই ছুঁই স্ট্রাইকরেটে৷ এমনকি টুর্নামেন্টে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে তাঁর রয়েছে তিনটি ফিফটি৷
ব্যাট হাতে ৬ ম্যাচে ৫৭.৪০ গড়ে লুহান-ড্রি প্রিটোরিয়াসের সংগ্রহ ২৮৭ রান৷
হাগ ওয়েবগেন (অস্ট্রেলিয়া)
হাগ ওয়েবগান অজিদের ক্যাপ্টেন হিসেবে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে ভীষণ চতুর ও সাহসী ছিলেন৷ মেঘাচ্ছন্ন কন্ডিশনে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তিনি টসে জিতে ব্যাট করার মতো সাহসী সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন, যার ফলাফল হাতেনাতে পেয়েছে অজিরা৷ ব্যাট হাতেও দারুণ ছন্দে ছিলেন এই অজি অধিনায়ক৷ ৭ ম্যাচে ৫০.৬৬ গড়ে রান করেছে ৩০৪, এর মধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রয়েছে তাঁর দারুণ এক শতক৷
উদয় সাহারান (ভারত)
গ্রুপ পর্ব ও সুপার সিক্সে ভারতের আধিপত্যের মূল কারণ ছিলেন দলটির ক্যাপ্টেন উদয় সাহারান৷ ব্যাট হাতে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল ব্যাটার তিনি৷ ৭ ম্যাচে ৫৬.৭১ গড়ে তিনি ৩৯৭ রান করেছেন। এর মধ্যে এক শতক ও তিনটি অর্ধশতক। ভারতকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ফাইনালে তুলেছেন, তবে ভারত ফাইনালে উঠলেও শিরোপাটা এবার অধরা রয়ে গেছে তাদের৷
মুশির খান (ভারত)
দীর্ষ প্রতিক্ষার পর বড় ভাই সরফরাজ খান ডাক পেয়েছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দলে৷ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রানের পসরা সাজানো এই ব্যাটারকে জাতীয় দলে খেলতে ধৈর্য্যের কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে৷ বড় ভাইয়ের মতো ছোট ভাই মুশির খানও দারুণ ব্যাট চালাতে পারেন৷ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে একমাত্র ব্যটার হিসেবে তাঁর রয়েছে দুটি শতক৷
ব্যাট হাতে ৭ ম্যাচে ৬০ গড়ে রান করেছেন ৩৬০৷ অবশ্য শুধু ব্যাট নয়, বলটাও ভালো ঘুরাতে করতে জানেন মুশির৷ টুর্নামেন্টে লেফট-আর্ম স্পিনার হিসেবে তিনি ৩.৬৩ ইকোনমিতে উইকেট তুলেছেন ৭টি৷
শচীন দাশ (ভারত)
চাপের মূহুর্তে শান্ত থাকার শিল্পটা ভালোই জানা শচীন দাশের৷ হয়তো কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকারকে দেখেই আয়ত্ত করেছেন এমন অসাধারণ শিল্প৷ ব্যাট হাতে ভারতের হয়ে ৭ ম্যাচে ৬০ গড়ে রান করেছেন ৩০৩৷ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে লক্ষণীয় ছিল তাঁর স্ট্রাইকরেট। ১১৬.৫৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট চালিয়েছেন তিনি৷
জুয়েল অ্যান্ড্রু (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ টুর্নামেন্টের সেরা চার দলের মধ্যে নাম তুলতে না পারলেও দলটির উইকেটকিপার জুয়েল অ্যাড্রু টুর্নামেন্টে আলো ছড়িয়েছেন৷ প্রায় একাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি, এছাড়া স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও তার রয়েছে ম্যাচ জেতানো অর্ধশতক৷ টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচে ৬৯ গড়ে রান তুলেছেন ২০৭৷
কুয়েনা মাফাকা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
তাঁকে বলা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ‘নতুন’ কাগিসো রাবাদা৷ বল হাতে গতি ও সুইং মিলিয়ে এক কমপ্লিট প্যাকেজ মাপাকা৷ টুর্নামেন্টে ৭ ম্যাচে ৩.৮১ ইকোনমিতে তিনি উইকেট তুলেছেন ২১ উইকেট৷ এর মধ্যে তিনবার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট৷ টুর্নামেন্টজুড়ে আফ্রিকার একমাত্র আবিষ্কার এই পেসার, তাই তো টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কারটাও গিয়েছে তাঁর দখলে৷
উবাইদ শাহ (পাকিস্তান)
প্রত্যেক ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকারের পাশাপাশি উবাইদ মোটামুটি একাই পাকিস্তানকে সেমিফাইনালে তুলেছেন৷ সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে স্নায়ুযুদ্ধের ম্যাচে পাকিস্তানের জয়ের অন্যতম বড় কারিগর উবাইদ শাহ৷ বল হাতে টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে ১৪ উইকেট তুলেছেন তিনি৷
নাথান অ্যাডওয়ার্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ ছন্দে ছিলেন বাহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার নাথান অ্যাডওয়ার্ড৷ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ব্যাটে-বলে দেখিয়েছেন ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স। টুর্নামেন্টে বল হাতে ৫ ম্যাচে ১১ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৫০ গড়ে তাঁর রয়েছে ১০১ রান৷
সৌম্য পান্ডে (ভারত)
সৌম্য পান্ডে বাহাতি ফিংগার স্পিনার হিসেবে দ্যুতি ছড়িয়েছেন টুর্নামেন্টে। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কাছে তিনি রীতিমতো আতঙ্কের নাম ছিলেন। একই সাথে বোলিংয়েও ছিলেন যথেষ্ট কৃপণ৷ ওভার প্রতি মাত্র ২.৪৪ রান খরচ করেছেন। টুর্নামেন্টে আর কোনো বোলার তাঁর চেয়ে এতো কম ইকোনমিতে বল করতে পারেননি৷ বোলারদের মধ্যে বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে তিনি যৌথভাবে দ্বিতীয় সেরা উইকেট শিকারী।
আরও পড়ুন: জাতীয় দলে টেস্ট খেলতে না চাওয়ায় দুঃসংবাদ পেলেন হারিস রউফ
ক্রিফোস্পোর্টস/১৬ফেব্রুয়ারি২৪/টিএইচ/এফএএস