রোনালদো সৌদিতে, মেসি আমেরিকায়, সর্বশেষ খবর নেইমারও গেলেন সৌদিতে!
ইউরোপের ফুটবলে হারাধনের ছিলো তিন ছেলে। সেখান থেকে এখন বাকি নেই কেউই! যে তিন তারকাকে দেখে বছরের পর বছর, রাতের পরে রাত অনিদ্রায় কাটিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা, তাদের সবাই ই এখন ইউরোপের বাইরে।
তাই, আগের মতো ফুটবলপাড়ার চায়ের দোকান গুলোয় তাদের নিয়ে জমবে না আড্ডা, হবে না তাদের নিয়ে তর্কাতর্কিও।
নেইমারের আল হিলালে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপ ফুটবলের জৌলুস কমে গেলো অনেকখানি। মেসি-রোনালদো ইউরোপ ছাড়ার পর নেইমারকে নিয়েই স্বপ্ন বুনেছিলো সমর্থকরা । তবে তিনি ৩১ বছরেই ইউরোপ ছেড়ে চলে গেলেন সৌদিতে।
এই ত্রয়ী যখন ইউরোপ মাতাতেন কী ঝলমলে ছিল সেই দিনগুলো! লা লিগার খবর নেওয়ার জন্য কতো মানুষ কতো শত রাত পাড়ি দিয়েছে অনিদ্রায়।
এল-ক্ল্যাসিকো হলে তো চায়ের দোকান থেকে সামাজিক মাধ্যম, সবজায়গায় ম্যাচের আগে থেকেই ছড়িয়ে পড়তো প্রচন্ড উত্তাপ। কত কথা, কত আলোচনা, এরপর ম্যাচ শেষে বিচার-বিশ্লেষণ।
যেই মেসিকে সবাই বার্সার ওয়ানম্যান সুপারস্টার ভেবেছিলেন, তাদেরও হতাশ হতে হয়। বার্সার দুর্দিনে অনিচ্ছায় চোখের জলে বিদায় নিতে হয় তাঁকেও। প্যারিসে গিয়েও স্বস্তিতে থাকতে পারেননি। চেয়েছিলেন আবার বার্সায় ফিরত্ কিন্তু আর ফেরা আর হলো কই!
শেষ পর্যন্ত চলে যান আমেরিকায়। সেখানেই হয়তো ক্যারিয়ারের শেষ দাঁড়িটা টানবেন। মেসির সমর্থকদের এখন খবর রাখতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের লিগের। সেখানে অবশ্য সুখেই আছেন এই মহাতারকা। তবে, মনের ভেতরে কি একটুও আফসোস লাগে না তার?
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরও ইউরোপ থেকে বিদায়টা মধুর হয়নি। হুট করে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে যান, সেখানে মনমতো পারফর্ম করতে না পারায় ফিরে আসেন নিজের পুরোনো ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। সেখানেও টিকতে পারেননি।
মাঠে নিজেকে হারিয়ে খোঁজা রোনালদোকে দিনকে দিন অনেক কথা শুনতে হয়েছিল। শেষমেশ চুক্তি বাতিল করে সৌদির ক্লাব আল নাসরে যোগ দেন। তার পথ ধরে ইউরোপ ছেড়েছেন আরও কয়েকজন। নিজের দলে ভিড়িয়েছেন সাদিও মানেকেও। আর এর সর্বশেষ সংযুক্তি হলেন নেইমার।
তবে নেইমারের সৌদি গমন নিয়ে নেটিজনদের বিশ্লেষণের অধিকাংশই নেতিবাচক। মেসি, রোনালদো না হয় বুড়ো হয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তারা এখন নিভু নিভু তারকা।
কিন্তু, ৩১ বছর বয়সেই ইউরোপের আলো থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল লিগে যাওয়াটা কতখানি যুক্তিযুক্ত, সেটাই ভাবছেন ফুটবলবোদ্ধারা। অথচ এই তিনজন যখন ইউরোপে ছিলেন, তখন সব চোখ যেন তাদের দিকেই থাকত।
সারা বিশ্বের দর্শকদের সিংহভাগ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ফুটবল উপভোগ করতেন। তাদেরও ছিল একক আধিপত্য। হয়তো নেইমারের প্রাপ্তির পাল্লাটা তেমন ভারী হয়নি। কিন্তু বাকি দু’জন মেসি ও রোনালদোর লড়াই তো গত এক দশক সবাই দেখেছেন।
রেকর্ড ভাঙা-গড়া আবার পুরস্কার জেতার মঞ্চে ছিল তাদেরই জয়জয়কার। ক্লাব ফুটবল মানেই ইউরোপ, আরেকটু ছোট করে বললে শীর্ষ পাঁচ লিগ ছিল– প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা, বুন্দেসলিগা, সিরি-এ ও লিগ ওয়ান। এখন ইউরোপের পরিবর্তে দর্শক টানবে সৌদি-আমেরিকার ক্লাব ফুটবল।
কিন্তু দর্শকরা যে বিনোদন চান, ফুটবলশৈলী দেখতে চান। এত দিন যে তিনজনকে দেখে বেশি আনন্দ পেয়েছেন, যাদের নিয়ে বেশি মাতামাতি করেছেন, তারা ইউরোপের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়েই আগের সেই দর্শকদের এখন চোখ রাখতে হবে সৌদি আরবের প্রো লিগ ও আমেরিকার মেজর সকার লিগে।
এরই মধ্যে মেসির সমর্থকরা আমেরিকার লিগগুলোতে মন দিয়েছেন। রোনালদোর বেলায়ও একই কথা। সর্বশেষ নেইমার সৌদিতে যাওয়ায় দুই দিকের দর্শক সমর্থকরা দেখবেন সেই লিগটি। হোক না কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় কিংবা কম তারকাময়!
তবে এটা নিশ্চিত যে, রোনালদোর পর নেইমারও সৌদিতে যাওয়ায় সেদিকে ভালোই দর্শক জোয়ার হবে। ইউরোপে অবশ্য তাদের জায়গা নিতে পারবেন না কেউই। মেসি,রোনালদো ও নেইমার– যুগে যুগে এ মানের তারকা পাওয়া অনেক কঠিন।
বস্তুত ফুটবলে প্রতি বছরই অনেক তারকার উত্থান ঘটে। তবে সবাই টিকতে পারেননা । আবার অনেকেই হারিয়ে যান নামের জৌলসে। এদিক থেকে ভিন্ন ছিলো মেসি-নেইমার-রোনালদো। বিশ্বের সকল দেশের আনাচে-কানাচে ছিলো তদের সমর্থকেরা।
এখন মেসি-রোনালদো-নেইমারের মতো কেউ না থাকলেও অসংখ্য পুরস্কারের ঝনঝনানি কিংবা বড় বড় শিরোপার উৎসব হয়তো অনেকেরই নজর কাড়বে। তাই আমেরিকা ও সৌদির পাশাপাশি ইউরোপেও নজর থাকবে দর্শকদের। সেক্ষেত্রে তারাও নতুন কাউকে খুঁজে নেবেন, যাদের নিয়ে বাজি ধরা যায়, যাদের নিয়ে নতুন আড্ডা জমে।
এমন বিবেচনায় থাকতে পারেন– কিলিয়ান এমবাপ্পে, আরলিং হালান্ড বা রবার্ট লেভানডস্কি। এ তিনজনের বাহিরেও অনেক তারকা আছে শীর্ষ পাঁচ লিগে। যাদের লড়াইটা হয়তো এদের সঙ্গে না হলেও ব্যালন ডি অর, দ্য বেস্ট, গোল্ডেন বুট, উয়েফার সেরাসহ আরও যত পুরস্কার রয়েছে, সেসবে থাকবেন এই তিনজনের কেউ কেউ।
হয়তো আরও অনেক তারকা-মহাতারকা আসবেন ইউরোপ রাজত্ব করতে। তবে, মনে রাখতে হবে এই ইউরোপের সোনালি সময় এসেছিলো মেসি-নেইমার-রোনালদোদের হাত ধরেই। ইউরোপের স্বর্ণালি অতীতে তাদের নাম লিখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে সারাজীবন।
আরও পড়ুনঃ মেসির অবিশ্বাস্য গোলে ফাইনালে মায়ামি (ভিডিও)
ক্রিফোস্পোর্টস/১৬আগস্ট২৩/এমএইচ