১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ ইতোমধ্যে পেরিয়েছে ২২টি আসর৷ ফুটবলীয় মহাযজ্ঞের এ আসরগুলো মাড়িয়ে গেছেন পেলে, ম্যারাডোনা, ক্রুইফ, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারদের মতো দুনিয়া সেরা তারকারা৷ ফুটবলের এ বৈশ্বিক আসরে দলীয় সাফল্যের বিচারে সবচেয়ে বেশি শিরোপা ছুঁয়েছে ল্যাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। ব্রাজিলের পরেই সবচেয়ে বেশি শিরোপার দেখা পেয়েছে জার্মানি ও ইতালি৷
অবশ্য সদ্য চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, উরুগুয়ে, স্পেনের ঝুলিতেও রয়েছে পরম আরাধ্যের বিশ্বকাপ ট্রফি৷ তবে বিশ্বকাপে সাফল্যের পাল্লায় সবচেয়ে বেশি ওজন ব্রাজিলের৷ ফুটবল বিশ্লেষকদের অনেকেই দেশটিকে সেরা ফুটবল খেলুড়ে দেশের তকমাও দিয়ে থাকেন৷
একনজরে ফুটবল বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ যারা-
ব্রাজিল
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ হিসেবে সবকটি আসরেই অংশগ্রহণ রয়েছে ব্রাজিলের। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ১১৪টি ম্যাচ খেলে ব্রাজিল৷ এর মধ্যে ৭৬টিতে জয়, সমান সংখ্যক ১৯টি ম্যাচে ড্র ও হারের দেখা পেয়েছে দলটি৷ ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী দলের হয়ে খেলেছেন পেলে, রোনাল্ডো, রোমারিও, রোনালদিনহো, কাফু, জিকো, গারিঞ্চার মতো খ্যাতনামা তারকরা৷ ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০,১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বার শিরোপা ঘরে তোলে সেলেসাওরা। তবে দীর্ঘ ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হেক্সা শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি ব্রাজিল৷
জার্মানি
বিশ্বকাপের প্রথমে আসরে জার্মানির কোনো অংশগ্রহন ছিল৷ ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করলেও ১৯৫০ বিশ্বকাপে জার্মানিকে নিষিদ্ধ করা হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সকল ধরনের প্রতিযোগিতা থেকে জার্মানিকে নির্বাসন দেওয়া হয়। তাই ফিফা বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত ২২টি আসরে জার্মানির অংশগ্রহণ রয়েছে ২০টিতে৷ বিশ্বকাপের রেকর্ডবুকে ব্রাজিলের পর সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে গ্রেড মুলার, মিরোস্লাভ ক্লোসার জার্মানি৷ বিশ্বকাপে ১১২ ম্যাচে জার্মানির জয় রয়েছে ৬৮ ম্যাচে। হার ২৩টি। ২১টিতে ড্র। ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ও সর্বশেষ ২০১৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি৷ তবে বিশ্বকাপের সর্বশেষ দুই আসরে মোটেও ভালো কাটেনি জার্মানদের৷ রাশিয়া ও কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে দলটি৷
ইতালি
জার্মানির মতো বিশ্বকাপের প্রথম আসরে অংশ নেয়নি ইতালিও৷ এরপর টানা ৪ আসরে অংশ নিলেও ১৯৫৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি দলটি৷ সর্বশেষ ২০১৮ ও ২০২২ কাপেও একই হাল আজ্জুরিদের৷ নিজেদের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো টানা দুইবার বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি দলটি৷ তবে ফুটবল বিশ্বকাপে রেকর্ড খাতায় আজ্জুরিদের সাফল্য বেশ ঈর্ষণীয়৷ ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে টানা দুইবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং ১৯৮২ ও ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জার্মানির সমান ৪টি শিরোপা জিতে ইতালি৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলা ৮৩ ম্যাচ ইতালির রয়েছে ৪৫ ম্যাচে জয়, ১৭ ম্যাচে হার, ২১ ম্যাচে ড্র।
আর্জেন্টিনা
বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম দুটি আসরে অংশ নিলেও ১৯৩৮, ১৯৫৪ ও ১৯৫৮ বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা৷ মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৭০ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি দলটি। তাই এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ১৮টি আসরে অংশ নেয় আলবিসেলেস্তেরা। ল্যাতিন আমেরিকায় ব্রাজিলের পর সবচেয়ে সফল দলটিও তারা৷ সর্বশেষ ২০২২ বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুলে আর্জেন্টিনা৷ এর আগে ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হয় আলবিসেলেস্তেরা৷ এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলা ৮৮ ম্যাচের মধ্যে আর্জেন্টিনার জয় ৪৭টিতে। ১৭ ম্যাচে ড্র ও ২৪ ম্যাচে রয়েছে হার।
ফ্রান্স
বিশ্বকাপের প্রথম টানা তিন আসরে ফ্রান্স অংশগ্রহণ করলেও ১৯৫০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি তারা৷ মূলত ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে তারা কোয়ালিফাই করতে পারেনি৷ কিন্তু তবুও তাদেরকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও সেই বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় ফ্রান্স৷ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১৬টি আসরে অংশ নেওয়া ফ্রান্স কোয়ালিফাই করতে পারেনি ৫ বার৷ ইউরোপীয়ান ফুটবলে জার্মানি, ইতালির পর সবচেয়ে বেশি শিরোপা ছুঁয়েছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ ও রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স৷ ‘শিরোপা জয়ী’ খেতাব ধরে রাখতে ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনালেও চমক দেখায় দলটি৷ তবে শেষ মূহুর্তে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে বঞ্চিত হয় দলটি৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৭৩ ম্যাচে ৩৯ জয়, ১৪টি ড্র ও ২০ ম্যাচে হার দেখেছে ফরাসিরা।
আরও পড়ুন: রোনালদোর বিপক্ষে ‘ঐতিহাসিক’ ম্যাচ খেলতে মুখিয়ে আছেন মেসি
ক্রিফোস্পোর্টস/১২জানুয়ারি২৪/টিএইচ/এফএএস