মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দারুণভাবে ফিরে এসে ভারতের বিপক্ষে ১৮৪ রানের জয় তুলে নিয়েছে। এই জয়ের ফলে অজিরা পাঁচ ম্যাচের সিরিজে একটিতে ড্রসহ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল। যদিও সিরিজে এখনো এক ম্যাচ বাকি, মেলবোর্নে এই জয় অস্ট্রেলিয়ার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ম্যাচের শেষ দিনে ট্র্যাভিস হেডের বোলিং এবং ভারতীয় দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে ক্রিকেট মহলে।
ট্র্যাভিস হেড, যিনি সাধারণত তার ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত, এবার বল হাতে নজর কাড়লেন। শেষ সেশনে ভারত যখন ধীরগতিতে এগোচ্ছিল, তখন হেডকে বোলিংয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। মূলত দলের ওভার রেট বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই তাকে আনা হয়েছিল। তবে তিনি অধিনায়ককে হতাশ করেননি।
পার্টটাইম অফস্পিনার হেড নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ঋষভ পন্তকে আউট করেন। তার ডেলিভারিটি ছিল একটি লং হপ, যা পন্ত ভুলভাবে উঁচু করে তোলেন এবং ওয়াইড লং-অন-এ ক্যাচ দেন।
এই উইকেট অস্ট্রেলিয়ার জন্য ছিল ম্যাচের মোড় ঘোরানোর মতো। এরপর মাত্র ২১ ওভারের মধ্যেই ভারত তাদের শেষ সাতটি উইকেট হারায়। অস্ট্রেলিয়া পঞ্চম দিনের শেষ ঘণ্টায় ম্যাচটি নিজেদের করে নেয়।
আরও পড়ুন :
» দর্শকের ঢল, হাই স্কোরিং ম্যাচ- কেমন ছিল বিপিএলের প্রথম দিন
» মাহমুদউল্লাহর অনুপ্রেরণা পেয়েই জয়সূচক ইনিংস খেলেন ফাহিম
» বিপিএল-র ম্যাচসহ টিভিতে আজকের খেলা (৩১ ডিসেম্বর ২৪)
ম্যাচ শেষে প্যাট কামিন্স হেডের প্রশংসা করে বলেন, ‘তার যেন একটা মাইডাস টাচ আছে। কোচের কৃতিত্ব দিতে হবে। আমরা ওভার রেট বাড়ানোর জন্য তাকে এনেছিলাম, কিন্তু সে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু এনে দেয়।’
এদিকে ভারতীয় দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা এই ম্যাচে তাদের পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯১ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৬ উইকেট তুলে নেয় ভারত। সেখানে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারতো টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু তারা সেই সুযোগ হাতছাড়া করে। অস্ট্রেলিয়ার লেজের ব্যাটসম্যানদের দ্রুত আউট করতে ব্যর্থ হয় ভারত, যার ফলে অজিরা দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৪ রানের লক্ষ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়। ভারতের ফিল্ডিং ব্যর্থতাও এই ম্যাচে হারের বড় কারণ ছিল।
দ্বিতীয় ইনিংসে যশস্বী জয়সওয়াল তিনটি সহজ ক্যাচ ফেলেন, যার কারণে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা বড় স্কোর করতে সক্ষম হন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ক্যাচগুলো ধরতে পারলে ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্য আরও সহজ হয়ে যেত। মেলবোর্নে ভারতের বাজে ফিল্ডিং তাদের সুযোগ হাতছাড়া করার আরেকটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ওভার রেটের সমস্যায় পড়েছিল। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নিয়ম অনুযায়ী, ধীর ওভার রেটের কারণে পয়েন্ট কাটা পড়ার শঙ্কা ছিল। এর আগে প্রথম চক্রেও এ কারণে শাস্তি পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে ম্যাচের শেষে তারা ওভার রেট পূরণ করতে পেরেছে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
হেড ও নাথান লায়নের দ্রুত বোলিং দলের ওভার রেট বাড়াতে সাহায্য করে। ম্যাচ শেষে হেড বলেন, ‘আমি এই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারিনি (০ ও ১ রান), তাই বোলিংয়ে অবদান রাখতে পেরে খুশি। চার দিন ধরে খেলার বাইরে ছিলাম। যখন বলা হলো আমাকে বোলিং করতে হবে, আমি খুব একটা খুশি ছিলাম না। কিন্তু আমি আমার কাজটি করতে পেরেছি।’
ম্যাচের অন্যতম আলোচিত পারফরমার মিচেল স্টার্ক। পিঠে এবং পাঁজরে ব্যথা থাকা সত্ত্বেও তিনি পুরো ম্যাচ খেলেন এবং শেষ দিনে দুর্দান্ত বোলিং করে বিরাট কোহলির গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেন। স্টার্কের পারফরম্যান্সে তার দৃঢ় মানসিকতা ও অঙ্গীকার ফুটে ওঠে।
ম্যাচ শেষে কামিন্স বলেন, ‘স্টার্ক একজন সত্যিকারের যোদ্ধা। ব্যথা সত্ত্বেও তার গতি কমেনি, বরং সে আমাদের বড় মুহূর্ত এনে দিয়েছে।’
মেলবোর্ন টেস্টের হার ভারতের জন্য বড় ধাক্কা। সিরিজের পঞ্চম এবং শেষ টেস্ট হবে সিডনিতে। বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফি ধরে রাখতে হলে ভারতকে জিততেই হবে। সিরিজ ড্র হলেও ট্রফি বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের কাছেই থাকবে। তবে আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ টেস্টে জয় তুলে নেওয়া সহজ হবে না ভারতীয়দের জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া— প্রথম ইনিংস ৪৭৪, দ্বিতীয় ইনিংস ২৩৪
ভারত— প্রথম ইনিংস ২৬৯, দ্বিতীয় ইনিংস ১৫৫
ফলাফল : অস্ট্রেলিয়া ১৮৪ রানে জয়ী
ক্রিফোস্পোর্টস/৩১ডিসেম্বর২০২৪/আইএইচআর/এসএ