যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উগান্ডার অংশগ্রহণ রূপকথাকেও হার মানাবে৷ ক্রিকেট সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিকভাবে এগিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ের মতো দেশকে টপকে আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় উগান্ডা৷ আইসিসির কোনো বৈশ্বিক আসরে এর আগে কখনো দেখা যায়নি দলটিকে৷ এবারের আসরের ২০ দলের মধ্যে অন্যতম নাম এই উগান্ডা৷
তবে ক্রিকেটের সাথে উগান্ডার পথচলা হয়েছে অনেক আগেই৷ ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সহযোগী দেশ হিসেবে ক্রিকেটের পরিসরে ঢুকে উগান্ডা, কিন্তু আদতে উগান্ডার ক্রিকেট গুছিয়ে ওঠে ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। এই সময়ে কোচ লরেন্স মাহাটলেইন, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্যে উগান্ডা ক্রিকেট দলের সাথে কাজ শুরু করেন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্যে গত দুই বছরে উগান্ডা বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেছে রুয়ান্ডা ও তানজানিয়ার বিপক্ষে৷ ৫৯ ম্যাচে মাত্র ৮টিতে হেরেছে দলটি। এতে করে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঠিক কীভাবে জয় বের করে নিতে হয়, তার ধারণাটুকু পেয়ে যায় তারা। শেষ পর্যন্ত টেস্ট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে আফ্রিকা অঞ্চল থেকে স্বপ্নের বিশ্বকাপে নাম লেখায় উগান্ডা।
আরও পড়ুন:
» সুব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুললেন দ্রাবিড়, বোনাসের অতিরিক্ত অর্থ নিতে নারাজ
» এনগোলা কান্তে : আবর্জনার পর্বত থেকে স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প
স্বপ্নের মঞ্চে উগান্ডার পতাকাকে প্রতিনিধিত্ব করার আগে আরো এক চমক নিয়ে হাজির হয় দেশটি৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে দল ঘোষণা করে ক্রিকেটাঙ্গনে সাড়া জাগায় দলটি৷ শুধু এখানেই নয়, নিজেদের জার্সিতেও সৃজনশীলতার ছাপ রাখে উগান্ডা৷ দেশটির জাতীয় পাখি সারস পাখির ছাপ এঁটে দেওয়া হয় জার্সিতে৷ তাই উগান্ডা ছিল এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
নিজেদের অভিষেক আসরে খুব একটা প্রত্যাশা ছিল না উগান্ডার৷ তবুও বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জয় পেয়েছিল দলটি৷ এতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে ব্রায়ান মাসাবার দল৷ শুধু মাসাবারা নয়, উগান্ডার জয়ের আনন্দে সেই রাতে একটুও ঘুমায়নি সেই দেশের ক্রিকেট পাগল ভক্তরাও৷
যদিও গ্রুপপর্বে জয় ছাড়াও দুটি বিব্রতকর রেকর্ডের জন্ম দিয়েছিল উগান্ডা৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৯ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০ রানে অলআউট হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড গড়ে দলটি। কিন্তু তাতে কি? উগান্ডার স্বপ্ন যখন ছিল বিশ্বকাপ, সেখানে এক জয় পাওয়া ছিল তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। এমন অর্জনের কৃতিত্ব যে দিতেই হয়৷
আরও পড়ুন:
» সুব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুললেন দ্রাবিড়, বোনাসের অতিরিক্ত অর্থ নিতে নারাজ
» আর্জেন্টিনার জার্সিতে যতগুলো ফাইনাল খেলেছেন মেসি
বিশ্বকাপের পর্ব শেষে দেশে ফেরার পর ছাদখোলা বাসে উগান্ডার হিরোদের রাজকীয় ভঙ্গিতে বরণ করে নেওয়া হয়৷ বিশ্বকাপে এক ম্যাচ জয়ের অর্জনে ছাদখোলা বাসে উন্মাতাল হয়ে উঠে উগান্ডা দল৷ এভাবে বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ, সবখানেই ছিল উগান্ডার নানা চমক৷
এবারের বিশ্বকাপে একটি অভিনব রেকর্ড গড়ে উগান্ডা৷ দলটির অফ স্পিনার ফ্রাঙ্ক এনসুবুগা ১৬ বছর বয়স থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখতেন৷ এর মাঝে চলে গেছে ২৭ বছর৷ তবুও স্বপ্নের পিছনে নিরন্তর ছুটেছেন এনসুবুগা৷ অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ৪৩ বছর বয়সে। এতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড গড়েন এই ডানহাতি অফ স্পিনার৷
শুধু এখানেই শেষ নয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উগান্ডার জার্সির রং ছিল পুরোপুরিই হলদে৷ যা হুবহু মিল ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল দল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সময় ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে একই হোটেলে অবস্থান করেছে অস্ট্রেলিয়া ও উগান্ডা দল। সেখানেই তাদের সঙ্গে দেখা করেন মিচেল মার্শ-ডেভিড ওয়ার্নাররা। উগান্ডার ড্রেসিং রুমে দলটির ক্রিকেটারদের সঙ্গে গল্প ও আড্ডায় সময় কাটান মার্শ।
সেখানে উগান্ডার সেই হলুদ জার্সি গায়ে জড়িয়ে ক্রিকেটীয় বন্ধনের এক অনন্য নজির স্থাপন করেন অজি অধিনায়ক মিশেল মার্শ৷ জাতি-ধর্মের বাঁধা টপকে উগান্ডার দলের সাথে মার্শের এমন মিশে যাওয়া টুর্নামেন্টে যোগ করেছিল বাড়তি মাহাত্ম্য। শুধু মার্শ নয়, উগান্ডার হলদে রঙে মিলেমিশে একাকার হয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নারও৷
ক্রিফোস্পোর্টস/৩০জুলাই২৪/টিএইচ/বিটি