গত রাতে প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম আকর্ষণীয় ম্যাচে লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মুখোমুখি হয়েছিল এনফিল্ডে। দুই ঐতিহাসিক ক্লাবের এই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলের ড্রতে শেষ হয়। ম্যাচে দুই দলই অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখালেও শেষ মুহূর্তে হ্যারি ম্যাগুয়ারের সহজ সুযোগ মিস করার কারণে তিন পয়েন্ট হাতছাড়া হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। অন্যদিকে, মোহাম্মদ সালাহ ও আমাদ দিয়ালোর অসাধারণ গোলের কারণে ম্যাচটি সমতায় শেষ হয়।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দল আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। এনফিল্ডের গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ ছিল লিভারপুল সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে। নিজেদের মাঠে খেলার কারণে লিভারপুল কিছুটা আত্মবিশ্বাসী ছিল, কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও নতুন কোচ রুবেন আমোরিমের অধীনে দারুণ কৌশল নিয়ে মাঠে নামে।
প্রথমার্ধে ইউনাইটেডের অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেস মিডফিল্ড থেকে অসাধারণভাবে আক্রমণ গড়ার চেষ্টা করেন। তার পাসিং ও প্লেমেকিং স্কিল বারবার লিভারপুলের রক্ষণভাগকে চাপে ফেলে। তবে লিভারপুল ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইক ও ইব্রাহিমা কোনাটে তাদের দৃঢ় রক্ষণ দিয়ে ইউনাইটেডের আক্রমণ নস্যাৎ করে দেন।
লিভারপুলের হয়ে ডারউইন নুনেজ ও কোডি গাকপো বেশ কয়েকটি আক্রমণ শানালেও ইউনাইটেড গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করেন। অন্যদিকে, ইউনাইটেডের আক্রমণগুলোও লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসনের অসাধারণ সেভে থেমে যায়। ফলে প্রথমার্ধ গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হয়।
প্রথমার্ধের ধৈর্যপূর্ণ লড়াইয়ের পর দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ম্যাচের ৫২তম মিনিটে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এগিয়ে যায়। ব্রুনো ফার্নান্দেসের চমৎকার থ্রু বল থেকে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্টিনেজ দুর্দান্ত শটে বল জালে জড়ান। এই গোলটি ম্যাচে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
তবে ইউনাইটেডের এই লিড বেশিক্ষণ টেকেনি। মাত্র সাত মিনিট পর, ৫৯তম মিনিটে ডারউইন নুনেজের কাটব্যাক থেকে কোডি গাকপো বল পেয়ে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করে লিভারপুলকে সমতায় ফেরান।
এরপর ম্যাচের ৭১তম মিনিটে লিভারপুলের হয়ে মোহাম্মদ সালাহ পেনাল্টি থেকে গোল করেন। ইউনাইটেড ডিফেন্ডার মাত্থাইস ডি লিগ্ট বল হাতে লাগালে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। সালাহ ঠান্ডা মাথায় স্পট কিক থেকে গোল করে লিভারপুলকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধের ৮০তম মিনিটে ইউনাইটেডের তরুণ উইঙ্গার আমাদ দিয়ালো অসাধারণ একটি গোল করেন। ব্রুনো ফার্নান্দেসের আরেকটি নিখুঁত পাস থেকে দিয়ালো বক্সে ঢুকে চমৎকার ফিনিশিংয়ে গোল করেন। এই গোলটি ম্যাচে সমতা ফেরায় এবং ইউনাইটেডকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট এনে দেয়।
ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি আসে যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সেন্টার-ব্যাক হ্যারি ম্যাগুয়ার লিভারপুলের গোলরক্ষক অ্যালিসনের সঙ্গে একা হয়ে যান। তবে ১০ গজ দূর থেকে নেওয়া শটটি গোলবারের উপর দিয়ে মারেন। তার এই সহজ সুযোগ মিস করায় ইউনাইটেড জয় থেকে বঞ্চিত হয়।
আরও পড়ুন:
» বিপিএলে সিলেট পর্বের ম্যাচসহ আজকের খেলা (৬ জানুয়ারি ২৫)
» ২০২৫ সালে ব্রাজিলের যত খেলা, একনজরে সময়সূচি
ম্যাচ শেষে ম্যাগুয়ারকে হতাশ হয়ে মাথায় হাত দিতে দেখা যায়। এই মিস নিয়ে ইউনাইটেড কোচ রুবেন আমোরিমও হতাশা প্রকাশ করেন। ‘এনফিল্ডে একটি পয়েন্ট পাওয়া সহজ নয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমরা জয়ের সুযোগ হারিয়েছি। আমাদের উন্নতি করতে হবে,’ বলেন তিনি।
মোহাম্মদ সালাহ এই ম্যাচে ইউনাইটেডের বিপক্ষে তার অসাধারণ ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। পেনাল্টি থেকে গোল করার মাধ্যমে তিনি প্রিমিয়ার লিগে ইউনাইটেডের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড গড়েন। এই গোলটি লিভারপুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও সালাহ নিজে জয় পেতে চেয়েছিলেন।
ম্যাচ শেষে সালাহ বলেন, ‘আমরা জয়ের জন্য খেলেছিলাম। কিন্তু ইউনাইটেডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে একটি পয়েন্টও মূল্যবান। আমরা আমাদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে ভালো করার চেষ্টা করব।’
ম্যাচ বিশ্লেষণে দেখা যায়, লিভারপুল বল দখলে এগিয়ে থাকলেও, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রক্ষণভাগ ও কাউন্টার অ্যাটাক ছিল কার্যকরী। তবে লিভারপুলের রক্ষণভাগের কিছু ভুল এবং সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হওয়া তাদের জয় বঞ্চিত করেছে।অন্যদিকে, ইউনাইটেডের বড় সমস্যা ছিল সুযোগ নষ্ট করা। বিশেষ করে ম্যাগুয়ারের মিস করা সহজ সুযোগ তাদের জয় বঞ্চিত করেছে। তবুও কোচ রুবেন আমোরিমের অধীনে ইউনাইটেডের উন্নতি চোখে পড়েছে।
এই ড্রয়ের ফলে লিভারপুল লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। তাদের সামনে এখন এফএ কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ব্যস্ত সূচি রয়েছে।
অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বর্তমানে লিগ টেবিলের ১৩তম স্থানে রয়েছে। তাদের সামনে আর্সেনালের বিপক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে, যা তাদের মরসুমের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ক্রিফোস্পোর্টস/৬জানুয়ারি২৫/আইআর/এফএএস