কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ভরাডুবির পর তিতের উত্তরসূরী হিসেবে শোনা যাচ্ছিল কার্লো আনচেলত্তির নাম। আনচেলত্তির জন্য মঞ্চ প্রস্তুত রেখে অস্থায়ী কোচ হিসেবে তখন দায়িত্ব দেয়া হয় ফার্নান্দো দিনিজকে৷ তবে আনচেলত্তি ব্রাজিলকে ‘না’ বলে দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের চুক্তিপত্রে সই করে৷ অন্যদিকে তখন ব্রাজিল ফুটবল ফেডারশনেও চলছিল টালমাটাল অবস্থা।
তবে গেল কয়েকদিনের দৌঁড়ঝাপের পর এবার স্বস্তির খবর পেয়েছে ব্রাজিল ফুটবল। টানা ১৩ মাস অস্থায়ী কোচ ফার্নান্দো দিনিজের অধীনে থাকা ব্রাজিলের জন্য স্থায়ী কোচ হিসেবে পূর্নমেয়াদে ডাগআউটে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সদ্য সাবেক সাও পাওলোর কোচ দরিভাল জুনিয়রকে৷
ব্রাজিলের কোচ হওয়া কে এই ‘দরিভাল জুনিয়র’
ব্রাজিল সমর্থকদের কাছে দরিভাল খুব পরিচিত নাম না হলেও, নিজ দেশে তাঁর রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা৷ ফুটবল পরিবার থেকে উঠে আসা দরিভাল জুনিয়রের চাচা ছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার দুদো৷ তাই পারিবারিকভাবেই ফুটবলের সাথে সখ্যতা ছিল দরিভালের৷ খেলোয়াড়ী জীবনে খেলেছিলেন পুরোদস্তুর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে। ফেরোভিয়ারিয়া, গুয়ারানি, পালমেইরাস, জুভেন্টেডসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবে খেলেছিলেন তিনি৷
তবে পালমেইরাস ও জুভেন্টেডের হয়েই তিনি ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়েছেন৷ উভয় ক্লাবের হয়ে খেলেন ২১৬ ম্যাচ। কিন্তু খেলোয়াড়ী জীবনে খুব বেশি উজ্জ্বল ছিলেন না দরিভাল। তাই একসময়ে খেলা ফেরোভিয়ারিয়াতেই আবার ফিরে আসেন তিনি৷ তবে এবার খেলোয়াড় হিসেবে নয়, দলটির কোচিংয়ের দায়িত্ব হাতে নেন তিনি৷ জীবনের প্রথম কোচিং ক্যারিয়ারও বেশি লম্বা হয়নি, মাত্র এক বছরের মধ্যেই ছেড়ে দিতে হয় ফেরোভিয়ারিয়াকে৷
দরিভালের কোচিং ক্যারিয়ারের ইতিবৃত্ত
২০০২ সালে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করা দরিভাল একাধারে ফ্লামেঙ্গো, পালমেইরাস, সাও পাওলো, সান্তোস, ফ্লুমিনেন্স সহ ২৫টি ব্রাজিলিয়ান ক্লাবে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোচিং করিয়েছেন৷ তবে কোনো ক্লাবেই তিনি ২ বছরের বেশি স্থায়ী হতে পারেনি৷ ২০ বছরের কোচিং জীবনে তিনি বরখাস্ত হয়েছেন ১৩ বার৷ এর মধ্যে কেবল ২০০৫ সালে ফোর্তালেজা, ক্রিসিউমা ও জুভেন্টেড থেকে তিন বার বরখাস্ত হয়েছেন দরিভাল৷
কোচিং ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানও অবশ্য তার পক্ষে রায় দিচ্ছে না। তাঁর অধীনে খেলা দলগুলো ৫৯৬ ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র ২৭৯ ম্যাচে। ড্র করেছে ১৪৩ ম্যাচে এবং হার মেনেছে ১৭৪ ম্যাচে। এর মানে দরিভাল শতকরা ৪৭ শতাংশ ম্যাচে জয়লাভ করেছেন৷ অবশ্য সর্বশেষ ১০ বছরে দরিভাল বিভিন্ন ক্লাবকে জিতিয়েছেন ৯টি শিরোপা৷ সর্বশেষ টানা দুই বার দুটি ভিন্ন ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গো ও সাও পাওলোকে জিতেয়েছেন কোপা দো ব্রাজিল।
এছাড়া ২০২২ সালে ফ্ল্যামেঙ্গোকে জিতিয়েছেন কোপা লিবার্তাদোরেস৷ ২০১০ সালে সান্তোসে থাকাকালীন নেইমার, রবিনহো, গান্সোর মতো তারকাদের কোচিং করিয়েছেন তিনি৷ তাই উঠতি তারকাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজে লাগানোর পদ্ধতি তাঁর ভালোই জানা রয়েছে৷ এজন্য দারিভাল জুনিয়রকেই ব্রাজিলের কোচিং ডাগআউটের জন্য বেছে নিয়েছে সিবিএফ৷
দরিভালের মাঠের কৌশল
ব্রাজিলিয়ানদের কাছে দরিভাল ডিফেন্সিভ ঘরনার কোচ হিসেবে পরিচিত৷ তাঁর প্রিয় ফরমেশন হচ্ছে ৪-২-৩-১। আবার কখনো ৪-৩-১-২ ফরমেশনেও দলকে খেলাতে পছন্দ করেন৷ ২০১০ সালে তিনি সান্তোসে নেইমার, রবিনহোদের ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলিয়েছেন৷ দলকে বিল্ডাপে খেলাতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন দরিভাল জুনিয়র৷ গোলকিপার থেকে ফরওয়ার্ড পর্যন্ত ছোট ছোট পাসে আক্রমণ সাজিয়ে গোল আদায় করার পক্ষে তিনি৷ দুজন সেন্টারব্যাক ও একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে সর্বদা রক্ষণে রেখে তিনি দুজন ফুলব্যাককে আক্রমণে ওঠার বার্তা দিয়ে রাখেন। এই হচ্ছে তাঁর কোচিংয়ের মূলমন্ত্র।
আগামী মার্চে স্পেনের বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে দরিভাল জুনিয়রের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট৷ জয়-পরাজয় কিংবা ড্র-ই বলে দিবে ব্রাজিলের কোচ হিসেবে দরিভালের ভবিষ্যত।
আরও পড়ুন: ২ মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেলেন লুকাস পাকেতা
ক্রিফোস্পোর্টস/১১জানুয়ারি২৪/টিএইচ/এফএএস