২০২৪ সালের শেষভাগে অর্থাৎ ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে যেন চলছে সুসময়ের জোয়ার। ক্রিকেটের নিচের পর্যায় থেকে শুরু করে নারীসহ জাতীয় দল পর্যন্ত একের পর এক দুর্দান্ত জয়ে উচ্ছ্বসিত বাংলার ক্রিকেট। বাংলার ক্রিকেটের এমন উন্নতিতে খুশি বিদেশি ক্রিকেট তারকারাও। সেই ধারাবাহিকতায় নিজের খুশির কথা ব্যক্ত করলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং বর্তমানে চিটাগং কিংসের মেন্টর শহীদ আফ্রিদি।
পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকেই টেস্ট হোয়াইটওয়াশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজ ড্র এবং তাদের মাটিতেই তাদেরকে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ করা সবকিছুই যেন বাংলার ক্রিকেটের সুসময়কে ধারণ করে। বিগত কয়েক মাস যাবত এমন সব স্মরণীয় সাফল্যে খুশি হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের প্রশংসায় ভাসালেন সাবেক এই পাক ক্রিকেটার।
আজ (মঙ্গলবার) খুলনা টাইগার্স ও চিটাগং কিংসের ম্যাচ চলাকালে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ এবং এদেশের ক্রিকেটের প্রতি নিজের আবেগ ও ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন আফ্রিদি।
তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে সবসময়ই আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে ভেবে এসেছি। এখানকার মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে। পাকিস্তান এবং বিপিএলে বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে খেলতে বেশ কয়েকবার আমি এখানে এসেছি। এখানকার মানুষগুলো খুবই ক্রিকেটপ্রেমী। ক্রিকেটের জন্য তাঁরা আমাকে অনেক সম্মানও দিয়েছে।’
আরও পড়ুন:
» ক্রিকইনফোর বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে এক বাংলাদেশি
» চেষ্টা করেও জেতাতে পারেননি শামীম, শুভসূচনা মিরাজদের
১৯৯৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ১৩ বার এবং বিপিএল শুরুর পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচটি ভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে ৬টি আসরে খেলেছেন। টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার জুড়ে শহীদ আফ্রিদি ছিলেন একজন মারকুটে ব্যাটার। ফলে তাঁর এমন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ধারণা ক্রিকেটারদের মাঝে প্রবেশ করাতেই মূলত তাঁকে দলের সঙ্গে যুক্ত করেছে চিটাগং কিংস কর্তৃপক্ষ।
বিপিএলের দ্বিতীয় দিনের প্রথম ম্যাচ মাঠে বসেই দেখেছেন আফ্রিদি। তবে শামীমের ব্যাটিং ছাড়া আর কোনোকিছুই তৃপ্তি দিতে পারিনি তাঁকে। খুলনার দেওয়া ২০৩ রানের বিশাল রান তাড়া করতে নেমে সপ্তম ওভারেই ৬ উইকেট হারায় বন্দরনগরীর দলটি। তবে এতো ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও ব্যাটারদের নিয়ে কোনো কথা বলেননি চট্টগ্রামের এই মেন্টর। বরং বোলারদের ঘাটতিগুলোকে তুলে ধরেন আফ্রিদি।
এ সময় আফ্রিদি বলেন, ‘মাত্র আসর শুরু হয়েছে। এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। আজকে আমরা বোলিং ভালো করতে পারিনি। ভালো একটি বোলিং ইউনিট আছে তবে পিচ বুঝে বোলিং করতে পারিনি। আমরা যদি ভালো বোলিং করতে পারি তাহলে আমাদের দলটি ভালো করবে। আর মেন্টর হিসেবে আমার কাজ সমর্থন ও উৎসাহ দেওয়া। সেটা আমি সবসময় করে যাবো।’
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মাঝে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কেমন উন্নতি দেখছেন এমন প্রশ্নও উঠে আসে। এমন প্রশ্নের জবাবে আফ্রিদি দেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটার সংগ্রহের জন্য ভালো ক্রিকেট একাডেমি গড়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। বিসিবির উচিত কিছু ভালো ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলা, যেখানে তরুণ ক্রিকেটাররা নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে।’
তিনি আরও আফ্রিদি বলেন, ‘বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো খেলেছ, সিরিজও জিতেছে। এর আগে তাঁরা বেশ ভুগেছে ক্রিকেট নিয়ে। তবে বর্তমানে তাঁরা নিজেদের উন্নতি করেছে। তাঁদের (বাংলাদেশের) এমন সাফল্যে আমি ভীষণ খুশি।’
বর্তমানে চিটাগং কিংসের মেন্টর হিসেব যোগ দিলেও বাংলাদেশের সঙ্গে শহীদ আফ্রিদির সম্পর্ক বেশ পুরোনো। শহীদ আফ্রিদির ক্রিকেটে অভিষেক সেই ১৯৯৮ সালে। তখন থেকেই ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের জার্সিতে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে এসেছেন মোট ১৩ বার। ফলে বাংলাদেশকে খুব কাছে থেকেই উপলব্ধি করেছেন তিনি। এজন্য বাংলাদেশ নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ হিসেবে ভাবেন তিনি। যা তিনি বারবার স্বীকারও করেন।
ক্রিফোস্পোর্টস/৩১ডিসেম্বর২৪/এসআর/বিটি