ক্রিকেটের পরতে পরতে সাজানো রয়েছে বৈচিত্র্য। খেলাটিতে যেকোনো সময় বদলে যায় ম্যাচের মোমেন্টাম। এভাবেই ক্রিকেট হয়ে উঠেছে রোমাঞ্চকর এক খেলা। ক্রিকেটে যেমন রয়েছে বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন মুহূর্ত। তেমনি এসব মুহূর্ত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে চোখ ধাঁধানো বোলিং কিংবা দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং। বোলিং বৈচিত্র্য— আরও অনন্য করেছে ‘দুসরা’। ক্রিকেটে ‘দুসরা’ কি কে এই ‘দুসরা’র জনক? এ নিয়ে জানার অন্ত নেই।
ক্রিকেটে ‘দুসরা’ কি
সাধারণত ক্রিকেটে আমরা দেখি, বোলাররা বিভিন্ন নিয়মে বিভিন্ন এঙ্গেলে বোলিং করে থাকেন। কখনও পেস বোলিং কখনও বা স্পিন বোলিং। তেমনই ‘দুসরা’ হলো এক ধরনের বোলিং সিস্টেম। এটি অফ স্পিন বোলারের একটি বিশেষ ডেলিভারি।
একজন অফ স্পিন বোলার যখন বলকে লেগ সাইড দিয়ে পিচ করিয়ে অফসাইডের দিকে টার্ন করান তখন সেটাকে ‘দুসরা’ বলা হয়ে থাকে। ‘দুসরা’ শব্দটি মূলত একটি উর্দু ভাষার শব্দ যার অর্থ ‘দ্বিতীয়টি’। ব্যাটারদের অনিবার্য শর্ট খেলতে দ্বিধায় ফেলতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে এই ‘দুসরা’ বোলিং।
আরও পড়ুন :
» মুশফিকুর রহিম ও তাওহীদ হৃদয়কে ঘিরে সুখবর
» টেস্ট ক্রিকেটে লাল ও গোলাপি বলের মধ্যে পার্থক্য কী?
‘দুসরা’ উর্দু ভাষার শব্দ সুতরাং অনেকে ধারণা করতেই পারেন এটার জনক হবেন কোনো পাকিস্তানি ক্রিকেটার। যারা মনে এমন ধারণা পোষণ করেন আসলেই তাদের ধারণা সঠিক। ‘দুসরা’ বোলিংয়ের জনক পাকিস্তানের কিংবদন্তি স্পিনার সাকলাইন মুশতাক।
‘দুসরা’র জনক সাকলাইন মুশতাক হলেও এই নামের জনক ছিলেন মুশতাকের সতীর্থ উইকেট-কিপার মঈন খান। মূলত সাকলাইন যখন বোলিংয়ে আসতেন তখন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলতে উইকেটের পেছন থেকে সাকলাইন মুশতাককে পরামর্শ দিতেন তিনি। বলতেন ‘দুসরা’ মারো অর্থাৎ দ্বিতীয় (অন্য নিয়মের) বলটি করো।
মঈন খানের কথা মতোই স্পিনার সাকলাইন মুশতাক বলটিকে লেগ থেকে অফসাইডে টার্ন করিয়ে ব্যাটারদের বল মোকাবিলা করতে বাধ্য করতেন। আর এতেই ব্যাটাররা পরাস্ত হয়ে যেতেন। একসময় ভাষ্যকার টনি গ্রেগ ম্যাচ চলাকালীন সাকলাইনের করা একটি বলকে ‘দুসরা’ ডেলিভারি বলে সম্বোধন করেন। সেখান থেকেই এই ধরনের বোলিং ক্রিকেট সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে যায়।
পরবর্তীতে মঈন খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এটাকে সাকলাইন মুশতাকের আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃতি দেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে অফ স্পিন বোলারদের জন্য অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠে ‘দুসরা’।
সাকলাইন মুশতাক এ ধরনের বোলিংয়ে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল। ধীরে এই বোলিংয়ে ঝুঁকে পড়েন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন, ভারতের হরভজন সিং এবং দক্ষিণ আফ্রিকার যোহান বোথার মতো ক্রিকেটাররা। এছাড়াও সাকলাইন মুশতাকের সতীর্থ শোয়েব মালিক ও সাঈদ আজমলও ‘দুসরা’ বোলিংয়ের প্রেমে পড়েন।
এদিকে আইসিসির বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী কোনো বোলার ১৫° ডিগ্রির কম কনুই বাঁকা করতে পারবে না। কিন্তু ‘দুসরা’ বোলিং করতে গিয়ে যোহান বোথা, সাঈদ আজমলের মতো বোলাররা নিজেদের কনুইকে অধিক মাত্রায় সংকুচিত করে ফেলতেন। ফলে তাদের এ ধরনের বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এছাড়াও ‘দুসরা’কে অবৈধ বোলিং অ্যাকশন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
এএফপির খবরে বলা হয়, সাকলাইন মুশতাক ‘দুসরা’কে অবৈধ মানতে নারাজ। বরং প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে দারুণ এক অস্ত্র বলে মনে করেন সাবেক এই পাক ক্রিকেটার।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৫ডিসেম্বর২৪/এসআর/এসএ