অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের আভিজাত্যের রঙ ব্যাগি গ্রিন। টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের জন্য এ এক পরম আরাধ্যের নাম। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে অজিদের মুকুট হিসেবে শোভা পায় এ ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ৷ বাইশ গজে কালের বিবর্তনে ব্যাগি গ্রিনের রঙ হারায়, তবে হারায় না ওই রঙের প্রতি অজিদের আবেগ৷ সম্প্রতি অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার নিজের বিদায়ী টেস্ট খেলার আগে ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ হারানোর পর তাঁর চোখে-মুখে দেখা এক অনিঃশেষ আবেগের প্রতিচ্ছবি৷ রঙ হারানো, ছিঁড়ে যাওয়া এ ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ ঐতিহাসিকভাবেই এভাবে অজিদের আবেগের জায়গা দখল করে আছে।
তবে বছরের শুরুতে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত টেস্টের তৃতীয় দিনে ব্যাগি গ্রিন পরিণত হয় ব্যাগি পিঙ্ক রঙে। সমগ্র স্টেডিয়াম ছেয়ে যায় এক গোলাপী সাগরে। ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে আম্পায়ারের হ্যাট, খেলোয়াড়দের ক্যাপ, জার্সির লোগো, ব্যাটের স্টিকার, স্টাম্প, কিংবা দর্শকসারি সবত্রই ছেয়ে যায় গোলাপী রঙে। আক্ষরিক অর্থেই সিডনি টেস্টের প্রতীক হয়ে ওঠে পিঙ্ক। নির্দিষ্ট একটা দিনকে কেন্দ্র করে ব্যাগি গ্রিন থেকে ব্যাগি পিংক হয়ে ওঠার নেপথ্যের ইতিহাসও বেশ কাকতালীয়।
সময়টা ১৯৯৫ সাল৷ অজি পেস ইউনিটের সেনাপতি গ্লেন ম্যাকগ্রার সাথে হংকং এর একটি নাইট ক্লাবে ব্রিটিশ বংশোদ্ভুত ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট জেন লুইস এর সাথে পরিচয় হয়। শুধু পরিচয় নয়, দুজনের মন দেওয়া নেওয়া শুরু তখন থেকেই। ১৯৯৭ সালে ৩১ বছর বয়সে জেনের দেহে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। তাই তখন নিজের অনিশ্চিত জীবনের সাথে ম্যাকগ্রাকে না জড়িয়ে তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চান জেন। কিন্তু আঁটকে যান ম্যাকগ্রার ভালবাসার টানে। সেই ভালবাসার টানে ২০০১ সালে জেনকে বিয়ে করেন গ্লেন ম্যাকগ্রা।
বিয়ের পর জেন অনেক চিকিৎসা নিয়েছিলেন, কিন্তু তবুও মরণঘাতী ক্যান্সার থেকে নিস্তার পান নি৷ ২০০৮ সালের ২৮ জুন স্তন ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর কাছে হেরে যান জেন ম্যাকগ্রা৷ মৃত্যুর আগেই ২০০৫ সালে স্বামী গ্লেন ম্যাকগ্রার সাথে গড়ে তুলেছিলেন ‘ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশন’। যেটির উদ্দেশ্য ছিল ‘টুগেদার উই ক্যান মেক আ ডিফারেন্স’ স্লোগানে পুরো অস্ট্রেলিয়া জুড়ে স্তন ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা৷
জেনের মৃত্যুর পর গ্লেন হাল ধরেন সংগঠনটির। এরই মধ্যে ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিডনি টেস্ট চলাকালে স্ত্রীর স্মরণে হাতে গোলাপী ফিতা পরে আসেন ম্যাকগ্রা। দৃশ্যটি সবার নজর কাড়ে। তাঁর দেখাদেখি পরের দিন দর্শকরাও পরে আসেন গোলাপি রঙের পোশাক। সেদিন থেকেই জেন ম্যাকগ্রার সম্মানে সিডনি টেস্টকে ঘোষণা করা হয় ‘পিংক টেস্ট’ হিসেবে। সেই থেকেই প্রতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে চলে পিঙ্ক টেস্ট৷ প্রতিবছর এই দিনে দর্শকের থেকে প্রচুর অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকে সংগঠনটি। এই পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ্য ২৭ হাজার পরিবারকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে তারা, গড়ে তুলেছে ২০০ জন নার্সের একটি দক্ষ দল।
সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে চলছে অজিদের ১৬তম পিঙ্ক টেস্ট৷ এর আগে ১৫টি পিঙ্ক টেস্টে অজিদের জয় রয়েছে ৮টিতে, বাকি ৬টি ড্র এবং হেরেছে মাত্র ১টিতে। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ও ৮৩ রানে হারে অজিরা৷
আরও পড়ুন: ৩দিন পরই ১২ বছরের পুরোন ক্যাপ ফিরে পেলেন ওয়ার্নার
ক্রিফোস্পোর্টস/০৫জানুয়ারি২৪/টিএইচ/এমটি