লম্বা সময়ের খেলা বলে ক্রিকেট নিয়ে অনেকের অভিযোগের কমতি নেই। কেউ কেউ দীর্ঘ সময় খেলা দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে পড়েন, আবার কেউ সময়ের কারণে ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলকে এগিয়ে রাখেন৷ তবে এবার ক্রিকেট ম্যাচের সময় বাঁচাতে অভিনব নিয়মের দিকে ঝুঁকছে আইসিসি৷ আসছে স্টপ ক্লক—ক্রিকেটে ‘স্টপ ক্লক’ পদ্ধতি কী? এ নিয়মে একটি ওয়ানডে ম্যাচের অন্তত ২০ মিনিট সময় কমিয়ে আনা সম্ভব৷ যদিও সাদা বলের দুই ফরম্যাটেই দেখা যাবে এই নিয়ম৷
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা—আইসিসির উদ্ভাবিত এই নিয়মটি হলো ‘স্টপ ক্লক’ পদ্ধতি৷ ইতোমধ্যে নিয়মটি বিভিন্ন ম্যাচে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ২০২৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত একটানা পরীক্ষামূলকভাবে চলবে এই স্টপ ক্লক পদ্ধতি। এরপর আগামী জুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্টপ ক্লক পদ্ধতি প্রয়োগ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর পথচলা শুরু হবে৷
ক্রিকেটে ‘স্টপ ক্লক’ পদ্ধতি কী? এটি কিভাবে চলবে?
একটি ম্যাচের গতি ধরে রাখা ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ম্যাচটি সমাপ্ত করার জন্য এই নিয়ম চালু করেছে আইসিসি। স্টপ ক্লকের নিয়ম অনুযায়ী—ম্যাচে বোলাররা প্রতি ওভারের মাঝে সর্বোচ্চ ৬০ সেকেন্ডের বিরতি দিতে পারবেন। এক ইনিংসে যদি তিনবারের চেয়ে বেশি সময় দেরি করা হয়, তাহলে ফিল্ডিং দলকে ৫ রান পেনাল্টি করা হবে এবং এই ৫ রান যুক্ত হবে ব্যাটিং দলের স্কোরবোর্ডে। যদিও বোলিং দলকে পেনাল্টি দেওয়ার আগে আম্পায়ারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক করা হবে, এরপরও সময়ের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি না রাখলে গুনতে হবে জরিমানা৷
ম্যাচ চলাকালীন ইলেকট্রনিক স্ক্রিনে ৬০ সেকেন্ডের ‘টাইমার’ চালু করবেন তৃতীয় আম্পায়ার। যেখানে প্রতি ওভারের মাঝে ৬০ থেকে ক্রমান্বয়ে শূন্য পর্যন্ত সেকেন্ড গণনা হবে। তবে কোনো ব্যাটার আউট হওয়ার পর নতুন ব্যাটার ক্রিজে আসা, ম্যাচের মাঝে ড্রিংকস বিরতি, কোনো ব্যাটসম্যান বা ফিল্ডারের ইনজুরির কারণে মাঠেই প্রাথমিক চিকিৎসা, ডিআরএস বা অন্য কারণে এবং ফিল্ডিংরত দলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেকোনো কারণে সময় নষ্ট হলে নিয়মটি প্রয়োগ হবে না। অর্থ্যাৎ সেক্ষেত্রে স্টপ ক্লক বন্ধ রাখা হবে৷
আরও পড়ুন:
» স্টপ ক্লক নিয়ে আসছে আইসিসি, বোলারদের জন্য কঠিন পরীক্ষা
এছাড়া গোটা ম্যাচটি একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে৷ ফিল্ডিং দল যদি সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইনিংস শেষ করতে না পারে, তবে সময়ের শেষ হওয়ার পর যতগুলো ওভার বাকি থাকবে সে সময় মাঠের ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে একজন ফিল্ডার কম রাখতে পারবে। অর্থাৎ মাত্র চার জন ফিল্ডার বাউন্ডারিতে রাখতে পারবে ফিল্ডিং দল।
শুধু তাই নয়, এর জন্য গুনতে হবে আর্থিক জরিমানাও৷ ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইনিংস শেষ করতে না পারলে ম্যাচ ফির ৫ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে বোলিং দলকে। তবে দলের অন্যান্য ক্রিকেটারদের তুলনায় অধিনায়ককে দিতে হবে দ্বিগুণ জরিমানা৷ কারণ ম্যাচে বিলম্ব হওয়ার জন্য অধিকাংশ সময়ই দায়ী থাকেন অধিনায়করা৷ তবে এই জরিমান ম্যাচ ফির সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ হবে, এর বেশি হতে পারবে না৷
আইসিসির নতুন উদ্ভাবিত এই নিয়মে বোলারদের বেশ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে৷ কারণে এক ওভার শেষে অন্য ওভার শুরু করতে তাদের খুব বেশি ভাবনার সময় থাকবে না৷ বিশেষ করে ম্যাচের উত্তেজনাপূর্ণ সময়েও ভাবনার সময় পাওয়া যাবে না৷ তাই বোলারদের পাশাপাশি এক্ষেত্রে অধিনায়কেরও বাড়তি সতর্কতা থাকতে হবে, যাতে কম সময়ের মধ্যে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷ আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই বাস্তবায়ন ঘটবে ক্রিকেটের স্টপ ক্লক পদ্ধতি৷
আরও পড়ুন: সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের আগে বাংলাদেশ শিবিরে দুঃসংবাদ
ক্রিফোস্পোর্টস/১৭মার্চ২৪/টিএইচ/এসএ