বিশ্বে গ্লোবাল স্পোর্ট বললে যে খেলার নাম সবার শীর্ষে থাকবে সেটা ফুটবল। আর বিশ্বব্যাপী বহুল জনপ্রিয় এই খেলায় যেটি ব্যবধান গড়ে দেয় সেটি হলো গোল। গোলের খেলা ফুটবলে শীর্ষ গোলদাতার তালিকায় এক সময়ে পেলে, রোমারিও, জোসেফ বাইকানদের দখলে থাকলেও সেটি এখন অতীত। ফুটবল ইতিহাসে অনেক দিন ধরেই সর্বোচ্চ গোলদাতার লড়াইটা বাকি সব কিংবদন্তিদের পেছনে ফেলে শুধু রোনালদো ও মেসির মধ্যে সীমাবদ্ধ। রোনালদো-মেসিসহ সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় কারা আছেন?
বর্তমানে ৮৯৫ গোল করে ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা পর্তুগিজ যুবরাজ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তার পরেই ৮৩৫ গোল নিয়ে তালিকার দুইয়ে তার দীর্ঘ সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি। এ তো গেলো পুরো ফুটবল ক্যারিয়ারের হিসাব।
নিজ দেশের হয়ে আন্তজার্তিক গোলের হিসেবেও শীর্ষ গোলদাতার সিংহাসনটা রোনালদোর দখলেই রেখেছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে ১০৬ গোল করে তালিকার তিনে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মেসি। ক্ষুদে জাদুকর তালিকার তিনে থাকলে দুইয়ে কে আছেন?
চলুন দেখা নেওয়া যাক—রোনালদো-মেসিসহ সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় কারা আছেন?
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
পর্তুগালের হয়ে ২০৭ ম্যাচে ১৩০ গোল করে তালিকার শীর্ষে তারকা খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গতকালই ইউরোর আগে নিজেদের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করেন পাঁচ বারের ব্যালন ডিঅর জয়ী। এর মধ্য দিয়ে তালিকার দুইয়ে থাকা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ৩৯ বছর বয়সী রোনালদোর গোল ব্যবধান দাঁড়ালো ২১ এ। জাতীয় দলের হয়ে রোনালদোর অভিষেক হয় ২০০৩ সালের আগস্টে। বর্তমানে তিনি ক্লাব পর্যায়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরের হয়ে খেলছেন।
আলী দাইয়ি
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর আগে আন্তর্জাতিক গোলদাতার তালিকায় দীর্ঘদিন ১ নম্বর স্থান দখলে রেখেছিলেন এশিয়ান ও ইরান জাতীয় দলের কিংবদন্তি ফুটবলার আলী দাইয়ি। ইরানের হয়ে আলী ১৪৮ ম্যাচে মোট ১০৯ গোল করেছেন। ২০০৬ সালে ফুটবলকে বিদায় জানানো এই খেলোয়াড়ের রেকর্ডটি প্রায় ১৫ বছর অক্ষুণ্ণ ছিল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রোনালদোদের গত রাতের প্রতিপক্ষ এই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই জোড়া গোল করে আলী দাইয়ির সর্বোচ্চ গোলের কীর্তি ভেঙে দেন সিআরসেভেন।
আরও পড়ুন:
» বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করে মেসির পাশে আগুস্তিন রুবের্তো
» ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ গোলের মুকুট রোনালদোর, সেরা চারে আর যারা
» ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর যত রেকর্ড
লিওনেল মেসি
আর্জেন্টিনার হয়ে ২০২২ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তিনে অবস্থান করছেন। বর্তমানে ১৮১ ম্যাচে ক্ষুদে জাদুকরের গোল সংখ্যা ১০৬টি। আশা করা যাচ্ছে, ২১ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া কোপা আমেরিকাতেই আলীকে পেছনে ফেলে তালিকার দুইয়ে উঠে আসবেন মেসি। তবে রোনালদোর থেকে বয়সে ২ বছরের ছোট হওয়া সত্ত্বেও তালিকার শীর্ষস্থান দখল করাটা মেসির পক্ষে যে সহজ হবে না সেটা অনুমেয়ই। রোনালদোও নিশ্চয়ই চাইবেন, অবসরের আগে গোল ব্যবধানটা আরেকটু বাড়িয়ে নিতে। কেননা এখনো বছর শেষে কমপক্ষে ৩৫-৪০ গোল করেই চলেছেন রোনালদো। অর্থাৎ পর্তুগিজ যুবরাজের ফর্ম যে খুব খারাপ সেটা বলা যাবে না। লিও মেসি পিএসজি ছাড়ার পর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির এর হয়ে খেলেন।
সুনীল ছেত্রি
তালিকার চারে আছেন সদ্য জাতীয় দল থেকে অবসরে যাওয়া এশিয়া ও ভারত উপমহাদেশের কিংবদন্তি ফুটবলার সুনীল ছেত্রী। সাবেক এই ভারতীয় অধিনায়ক জাতীয় দলের জার্সিতে ১৫১ ম্যাচে ৯৪ গোল করেছেন। ক্লাব পর্যায়ে খেলেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) দল বেঙ্গালুরু এফসির হয়ে। গত ৬ জুন ঘরের মাঠে কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার মধ্য দিয়ে জাতীয় দল থেকে চিরতরে বুটজোড়া তুলে রাখেন এই ভারতীয় কিংবদন্তি। সুনীলের বিদায়ী ম্যাচটি ০-০ ব্যবধানে শেষ হয়।
মোখতার দাহারি
মালয়েশিয়ার কিংবদন্তি এই খেলোয়াড় মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। অবশ্য এই সময়ের মধ্যেই নিজ দেশের হয়ে ইতিহাস রচনা করে গেছেন সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলা এই মালয়েশিয়ান ফুটবলার। জাতীয় দলের হয়ে ফিফা স্বীকৃত ১৩১ ম্যাচ খেলে দাহারি মোট ৮৯ গোল করেছেন। ১৯৫৩ সালে মালয়েশিয়ায় জন্মগ্রহণ করা এই তারকা খেলোয়াড় তিন বছর শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে ১৯৯১ সালে নিজ দেশের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আলী মাবখৌত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় বর্তমানে ছয় নম্বরে আছেন। আরব আমিরাতের হয়ে ২০০৯ সালের নভেম্বরে অভিষেক হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১১ ম্যাচ খেলে আলীর গোল সংখ্যা ৮৫। ক্লাব পর্যায়ে তিনি স্বদেশী ক্লাব আল জাজিরার হয়ে খেলেন।
রোমেলু লুকাকু
বেলজিয়ামের ৩১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু তালিকার ৭ নম্বরে আছেন। বর্তমানে ইতালিয়ান ক্লাব রোমার হয়ে খেলা এই বেলজিয়ান আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১১৫ ম্যাচে ৮৫ গোল করেছেন। রোমার হয়ে ধারে খেলা এই স্ট্রাইকার বর্তমানে ইংলিশ ক্লাব চেলসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছেন। এই চুক্তির মেয়াদ চলতি বছর ৩০ জুন শেষ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে আরেক ইতালিয়ান জায়ান্ট নাপোলিতে তার যোগদানের ব্যাপারে গুঞ্জন শোনা গেছে।
ফেরেঙ্ক পুসকাস
জাতীয় দলের হয়ে ৮৫ ম্যাচে খেলে ৮৪ গোল নিয়ে তালিকার আটে অবস্থান করছেন রিয়াল মাদ্রিদ ও হাঙ্গেরীয় তারকা ফরোয়ার্ড ফেরেঙ্ক পুসকাস। ১৯৪৫ সালে হাঙ্গেরির হয়ে অভিষেকের পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে স্পেনের হয়েও অভিষেক করেন এই কিংবদন্তি। পুসকাসকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই হাঙ্গেরীয় কিংবদন্তিকে ফুটবলের প্রথম আন্তর্জাতিক মহাতারকা বলা হয়।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময় পুসকাস তিনটি ইউরোপিয়ান কাপও (বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জেতেন। ১৯৫২ সালে নিজে দেশকে অলিম্পিকে সোনা জেতানোর পর ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে তোলেন পুসকাস। কিন্তু সেবার রানার্সআপ হিসেবে আসর শেষ করতে হয় তাদের। ২০০৬ সালের নভেম্বরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রবার্ট লেওয়ানডস্কি
পোল্যান্ডের ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় তিনি। ক্লাব পর্যায়ে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, বায়ার্ন মিউনিখ, বার্সেলোনার মত ক্লাবের হয়ে খেলা এই স্ট্রাইকার বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাসেরও অংশ হয়ে গেছেন। পোলিশদের হয়ে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে অভিষেক করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫০ ম্যাচে ৮২ গোল করেছেন লেওয়ানডস্কি।
আসন্ন ইউরো আসরেই ৮৪ গোল নিয়ে এগিয়ে থাকা পুসকাসকে পেছনে ফেলার মোক্ষম সুযোগ রয়েছে ৩৫ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারের সামনে। বর্তমানে পোল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করছেন এই বার্সেলোনা স্ট্রাইকার।
গডফ্রে চিতালু
জাম্বিয়ার পাঁচ বারের বর্ষসেরা ফুটবলার গডফ্রে চিতালু এই তালিকার ১০ নম্বর স্থানে আছে। তাকে জাম্বিয়ার ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলা হয়। জাতীয় দলের হয়ে এই ফরোয়ার্ড ১১১ ম্যাচে গোল করেছেন ৭৯টি।
এক পঞ্জিকাবর্ষে ১১৬ গোল করার কীর্তি রয়েছে এই জাম্বিয়ান ফরোয়ার্ডের। ১৯৬৮ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক করা এই খেলোয়াড় ১৯৯৩ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।
ক্রিফোস্পোর্টস/১২জুন২৪/এমএস/এসএ