অবশেষে টানা ১২ বছর ধরে বিসিবি সভাপতির চেয়ার আঁকড়ে ধরে থাকা নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করেছেন৷ গত এক যুগ ধরেই বিসিবির সর্বময় কর্তা ছিলেন তিনি৷ এবার বাংলাদেশ ক্রিকেটে শেষ হলো পাপন যুগের অধ্যায়৷ তার পরিবর্তে বিসিবির নতুন সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক ফারুক আহমেদ৷
নাজমুল হাসান পাপনের পদত্যাগের ইঙ্গিত অবশ্য আগেই পাওয়া গিয়েছিল৷ ছাত্র- জনতার গণ আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর দেশের প্রতিটি অঙ্গনের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) চলছে পালাবদল। এবার সেই তালিকায় যোগ হয়েছে নাজমুল হাসান পাপনের নাম৷
২০১২ সালে বিসিবির সভাপতি পদ থেকে আ হ ম মুস্তফা কামাল বিদায় নিলে সরকার মনোনীত সভাপতি হিসেবে বিসিবির সভাপতি হন নাজমুল হাসান পাপন৷ ২০১৩ থেকে নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে টানা তিন মেয়াদে বিসিবির প্রধান ছিলেন পাপন৷ সবমিলিয়ে বিসিবির সভাপতি চেয়ার ছিলেন প্রায় ১২ বছর৷
আরও পড়ুন:
» বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে স্পোর্টস ইনস্টিটিউট, এটি কিভাবে কাজ করে?
» ২০২৫-এ ৪৪ ছুঁই ছুঁই ধোনিকে খেলাতে চেন্নাইয়ের কী পরিকল্পনা?
পাপনের পদত্যাগের আগেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ফারুক আহমেদকে বিসিবি সভাপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই তাকে নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। অবশেষে বিসিবি সভাপতির চেয়ার পেলেন ফারুক আহমেদ৷
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ফারুক আহমেদের সখ্যতা অবশ্য বেশ পুরোনো। খেলোয়াড়ি জীবনে অলরাউন্ডারের ভূমিকায় থাকলেও ব্যাটার হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন ফারুক আহমেদ। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১৫ বছর ধরে ঘরোয়া লিগ খেলার অভিজ্ঞতা।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে বাংলাদেশ জাতীয় দলের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। সেই সূত্র ধরেই ১৯৯৩ আইসিসি ট্রফিতেও বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন তিনি৷ সবশেষ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেছেন ফারুক আহমেদ। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ৷ সবমিলিয়ে জাতীয় দলের হয়ে তার সাতটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে৷
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও কাজ করেছেন ফারুক আহমেদ৷ দুই দফায় পালন করেছেন প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব। প্রথম দফায় ২০০৩ সালে প্রধান নির্বাচক পদে দায়িত্ব পালনকালে অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে জাতীয় দলে তুলে আনেন ফারুক আহমেদ। পরবর্তীতে তারাই হয়েছিলেন দেশে ও বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম বড় তারকা৷
আরও পড়ুন:
» ইংলিশ ফুটবলে হামজা চৌধুরীর উত্থান যেভাবে
» হাজার কোটি টাকার শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের কাজ বন্ধের নির্দেশ
দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের অধীনে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পান ফারুক আহমেদ। দ্বিতীয় মেয়াদে তার দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্য ধরা দেয়৷
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথম বারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। যা জাতীয় দলের ইতিহাসের সেরা সাফল্য হয়ে আজও অমলিন হয়ে রয়েছে। যদিও এরপর খুব বেশিদিন প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বে থাকতে পারেননি ফারুক আহমেদ।
দল নির্বাচনে বিসিবির অমূলক হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন ফারুক আহমেদ। ক্রিকেট সংক্রান্ত অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে সবসময় সরব থাকা সেই ফারুক আহমেদ এবার ৮ বছর পর ফিরলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে। ফারুক আহমেদের এমন প্রত্যাবর্তন অবশ্য এবার নির্বাচক হিসেবে নয়, বোর্ড সভাপতি হিসেবে।
ক্রিফোস্পোর্টস/২২আগস্ট২৪/টিএইচ/বিটি