‘স্বর্ণ পদক নয়’ অলিম্পিকের সোনাকে ‘ফেলপস পদক’ নাম দেওয়া হোক— অলিম্পিকে মাইকেল ফেলপসের কিংবদন্তি ক্যারিয়ার নিয়ে টুইটারে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন সাবেক মার্কিন নারী ফুটবলার মিয়া হ্যাম৷
অলিম্পিকে সাঁতারে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া ফেলপসের অলিম্পিক ক্যারিয়ারজুড়ে রয়েছে ২৮টি পদক৷ এর মধ্যে ২৩টিই স্বর্ণপদক। তাই মিয়া হ্যামের এমন মন্তব্য হয়তো মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ ১৮৯৬ সালে শুরু হওয়া অলিম্পিকে ফেলপসের চেয়ে বেশি পদক নেই কোনো অ্যাথলেটের৷ এমনকি সাঁতারের ইতিহাস ঘাঁটলেও ফেলপসতুল্য কাউকেই পাওয়া যাবে না৷
জলমানব অথবা জলের রাজা৷ মাইকেল ফেলপসের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায় এই শব্দগুলো৷ প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে ২৩টি অলিম্পিক পদক নিয়ে পাভো নুরমির ৮০ বছরের রেকর্ড ভাঙেন ফেলপস৷ ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে অবসর নিলেও অবসর ভেঙে ২০১৬ রিও অলিম্পিকে আবারো দ্বিগুন শক্তিতে যেন ফিরে আসেন ফেলপস৷ ওই আসরেই জিতে নেন পাঁচটি স্বর্ণপদক৷
আরও পড়ুন :
» চতুর্থ ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ এইচপি
» বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভারতে আয়োজনের প্রস্তাব, যা বললেন জয় শাহ
» রোনালদোর গোল ও অ্যাসিস্টে ফাইনালে আল নাসর
কিন্তু মাইকেল ফেলপস কিভাবে হয়ে উঠলেন সাঁতারে সর্বকালের সেরা কিংবদন্তি? কিভাবে নিজেকে পুলে গড়ে তুললেন এক অতিমানবীয় চরিত্র হিসেবে? যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ফেলপসকে নিয়ে ছোটবেলা থেকেই তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল, ফেলপস হবে দেশসেরা সাঁতারু। কিন্তু দেশসেরা নয়, ফেলপস হয়ে গেলেন দুনিয়ার সেরা সাঁতারু, এমনকি ইতিহাসের সেরাও৷
অথচ ছোটবেলায় বড় বোন হুইটনির চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন তিনি৷ ১৪ বছর বয়সেই হুইটনি বাটারফ্লাই সাঁতারে দেশের সেরা দশে জায়গা করে নেন৷ কিন্তু তখন ফেলপস ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত। কোনোকিছুতেই যেন স্থির হতে পারতেন না৷ সেই সময়ে এক স্কুলশিক্ষক তার মাকে বলেছিলেন, আপনার ছেলে কখনোই জীবনে একটি স্থির লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। তার মাও দেখলেন, স্কুলের পড়াশোনা, বাড়ির কাজ, খেলাধুলা সব জায়গাতে যেন ফেলেপস শেষ করতে পারে না।
আরও পড়ুন :
» অলিম্পিকের সর্বকালের সেরা তারকারা
» অলিম্পিক গেমস: বিদায় প্যারিস, স্বাগত লস অ্যাঞ্জেলস
বিষয়টি নজরে আসে ফেলপসের কোচ ক্যাথি লিয়ার্সের। সেজন্য তিনি ফেলপসকে অন্য কোনো সাঁতারে সময় না দিয়ে শুধু ব্যাকস্ট্রোকেই সময় বেশি দিতে বলতেন। যেন এতে পানির সঙ্গে ফেলপসের সখ্যতা গড়ে ওঠে। ক্যাথি লিয়ার্স জানতেন, একবার যদি পানির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে এরপরে সাঁতারু নিজেই জেনে যায় তাকে কী করতে হবে। হয়েছেও তাই৷ ধীরে ধীরে পানির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেন ফেলপস৷ এরপরে ফ্রিস্টাইল, বাটারফ্লাইতে আনন্দ খুঁজে পেতে থাকেন তিনি। এতে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফেলপসকে৷
বিশ্বব্যাপী ধীরে ধীরে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেন সেরা সাঁতারু হিসেবে৷ সাঁতার ছিল তার কাছে আশীর্বাদের মতো। পুল ছিল তার একমাত্র আশ্রয়। নিজের ভেতরের সব অস্থিরতা, চাপ, ক্ষোভ সেখানে গিয়ে অনুপ্রেরণায় বদলে ফেলতো মাইকেল ফেলপস।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৫আগস্ট২৪/টিএইচ/এসএ