র্যামন প্লাতেরো, জর্জে গোমেজ ও ফিলিপো নুনেজ–ফুটবল অঙ্গনে নামগুলো খুব বেশি পরিচিত নয়। তবে তাঁরাই ছিল ব্রাজিলের সর্বশেষ বিদেশি কোচ৷ যদিও কোচ হিসেবে কেবল গুটিকয়েক ম্যাচে ব্রাজিলের ডাগআউটে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য হয়েছে তাঁদের৷
১৯২৫ সালে ব্রাজিলের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো বিদেশি কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেয় উরুগুয়ের র্যামন প্লাতেরো। অবশ্য তাঁর দায়িত্বকাল স্থায়ী হয়েছিল কেবল ৪ ম্যাচ। এরপর ১৯৪৫ সালে পর্তুগালের জর্জে গোমেজকে দায়িত্ব দেয় ব্রাজিল, তাঁর সাথে সহকারী হিসেবে ছিল ব্রাজিলিয়ান ফ্লাবিও কস্তা৷ কিন্তু মাত্র ২ ম্যাচ পর তাঁকেও ছাঁটাই করা হয়৷ এরপর ১৯৬৫ সালের দিকে দায়িত্ব পায় আর্জেন্টাইন ফিলিপো নুনেজ৷ কিন্তু তিনিও একটি প্রীতিম্যাচের বেশি ব্রাজিলের কোচ হিসেবে থাকার সুযোগ পাননি৷ এটাই ছিল ব্রাজিল ফুটবলে বিদেশি কোচদের আমলনামা৷
প্লাতেরো দিয়ে শুরু নুনেজকে দিয়ে শেষ৷ ১৯৬৫ সালের পর থেকে আর কখনো ব্রাজিলের ডগআউটে দেখা যায়নি কোনো বিদেশি কোচের নাম৷ ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর অনেকেই ব্রাজিলের ফুটবলে বিদেশি কোচ দেখতে চেয়েছিলেন৷ তিতের উত্তরসূরী হিসেবে তখন শোনা গিয়েছিল হোসে মরিনহো, কার্লো আনচেলত্তি ও পেপ গার্দিওলার মতো বড় নাম৷ শেষমেশ কার্লো আনচেলত্তির সাথে মোটামুটি কথা পাকাপাকি করে রেখেছিল ব্রাজিলি ফুটবল ফেডারেশন৷ কিন্তু ফেডারেশনে সরকারি হস্তক্ষেপ ও নানা উত্থান-পতনের ফলে আনচেলত্তি সোজাসাপ্টা ব্রাজিলের কোচ হওয়ার প্রস্তাবকে ‘না’ বলে দিয়েছিলেন। ফলে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে আরো এক বিদেশি কোচের আগমন ভেস্তে যায়৷
সর্বশেষ স্বদেশী দরিভাল জুনিয়রের কাছেই দারস্থ হয়েছে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন। আগামী মার্চে ইংল্যান্ড ও স্পেনের বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে দরিভালের আমলনামা৷
তর্কে-বিতর্কে বিদেশি কোচ
কাতার বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর অনেক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী ফুটবলারও ডাগআউটে বিদেশি কোচ দেখতে চেয়েছেন। আবার অনেকেই বিদেশি কোচকে ব্রাজিলের ফুটবলের জন্য অপমানজনক বলে উল্লেখ করেছেন৷ ফলে ব্রাজিলের ফুটবলে বিদেশি কোচ রীতিমতো এক বিতর্কিত বিষয় হিসেবে গণ্য হয়৷ কিংবদন্তী রিভালদো মনে করেন,‘আমি বিদেশি কোচের পক্ষপাতী নয়৷ আমি মনে করি ব্রাজিলে বিদেশি কোচ নিয়ে আসলে তা দেশি কোচদের জন্য অসম্মান হবে৷ আমাদেরও অনেক সেরা কোচ আছে, যাদের সামর্থ্য রয়েছে ব্রাজিলকে শিরোপা জেতানোর৷’
অন্যদিকে রোনালদো নাজারিও বিদেশি কোচের পক্ষেই রায় দিয়েছেন৷ ‘আমি কোচ হিসেবে ব্রাজিলের জন্য পেপ গার্দিওলা, কার্লো আনচেলত্তি ও হোসে মরিনহোকে পছন্দ করবো। শুধু সাবেক খেলোয়াড় নয়, সমর্থকরাও বিদেশি কোচ নিয়ে দুই ধারায় বিভক্ত৷ অনেকেই মনে করেন বিদেশি কোচ ব্রাজিলের ফুটবল সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক। ব্রাজিলের ফুটবল মানে ‘সাম্বা নৃত্য’ ও ‘জোগো বনিতো’ সৌন্দর্য্য। বিদেশি কোচ আসলে ব্রাজিলের এই সৌন্দর্য্য বিলীন হবে বলে মনে করেন অনেক সমর্থকরা৷
স্থায়ী হয়নি কোনো নাম
ব্রাজিল ফুটবলে কোচদের তালিকা বেশ দীর্ঘ৷ সর্বশেষ দরিভাল জুনিয়রকে নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৪জন কোচ ব্রাজিলের দায়িত্বে ছিলেন৷ এর মধ্যে মারিও জাগালো, কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা, দুঙ্গা ও স্কলারিরা বেশকিছু দিন স্থায়ী ছিলেন৷ বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। স্বদেশী হলেও সেই অর্থে কেউই স্থায়ী হতে পারেনি ব্রাজিলের ডাগআউটে।
মূলত ব্রাজিলের ফুটবল সংস্কৃতিতে একটা বদ্ধমূল ধারণা হলো, কোচকে খুব বেশিদিন রাখা যাবে না। বর্তমান কোচ দরিভাল জুনিয়রও তাঁর ২০ বছরের কোচিং জীবনে বরখাস্ত হয়েছেন ১৩ বার৷ অথচ অন্যান্য ফুটবল দলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। রাতারাতি সাফল্যের পিছনে না ছুঁটে সেনেগালের আলিউ সিসে, ইংল্যান্ডের গ্যারেথ সাউথগেট, ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশমের ওপর আস্থা রেখেছিল ওই দেশগুলোর ফেডারেশন৷ এর ফলাফলও পেয়েছে দেশগুলো৷ এভাবে ঘন ঘন কোচ বদলানোসহ নানা জটিলতায় গত দুই দশকে ব্রাজিলের ফুটবলের সত্যিকারের দাপট ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে৷
আরও পড়ুন: প্যারিস অলিম্পিক: নতুন যুক্ত হলো যেসব খেলা
ক্রিফোস্পোর্টস/৩ফেব্রুয়ারি২৪/টিএইচ/এমটি