সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেও আড়ালে যেতে হয়েছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে। সংবর্ধনা, পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেলেও নিয়মিত মাঠের খেলা পাননি সাবিনা-ঋতুপর্ণারা। এমনকি নিয়মিত বেতনেরও মুখ দেখেননি তারা। ২০২২ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর নারী দলের চিত্রটা ঠিক এমনই ছিল।
টানা দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আগের মত সংবর্ধনার কমতি রাখা হচ্ছে না এবারও। সাফ জয়ী গোটা দল ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছেন কোটি টাকার পুরস্কার। রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। সংবর্ধনা, অভিনন্দন, আর্থিক পুরস্কার; সবই তাঁদের প্রাপ্য।
কিন্তু এত কিছুর পরেও কিছু দিন পর আড়ালে চলে যায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। গতবার ঘরোয়া টুর্নামেন্ট কিছু পেলেও আন্তর্জাতিক ম্যাচ পাননি তারা। আর্থিক সংকটের অজুহাত দেখিয়ে মেয়েদের অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমারে পাঠানো হয়নি। নিয়মিত ঘরোয়া খেলা না হওয়া, আর্থিক সমস্যা, নানা রকমের হতাশার জন্য দল ছেড়ে গেছেন সাফজয়ী ডিফেন্ডার আঁখি, ফরোয়ার্ড স্বপ্নারা।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল ইতিহাসে খেলোয়াড় ঝরে যাওয়ার এমন অনেক গল্প আছে। এ সব ফুটবলারদের ধরে রাখতে নিয়মিত ঘরোয়া লিগ এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচ বাড়াতে হবে। ছেলেরা এমন লিগ পেলেও মেয়েরা এক শ হাত পেছনে। মেয়েদের জন্য ঘরোয়া লিগ আছে নাম মাত্র। সর্বশেষ লিগে বসুন্ধরা কিংস দল না গড়ায় মেয়েরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েকটি দলকে হাতেপায়ে ধরে লিগে অংশগ্রহণ করতে রাজি করানো হয়। এটাই হলো দেশের নারী ফুটবলের বাস্তব চিত্র। অনেক নতুন মুখ একটা পর্যায়ে হারিয়ে যাচ্ছেন। হারিয়ে যাওয়ার খবর কেউ রাখে না।
এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন মনে করেন, ‘ বার্ষিক ক্যালেন্ডার থাকা উচিত মেয়েদের জন্য। যেখানে তাদের সময়সূচি জানা থাকবে। তার জানা থাকবে এবং তৈরি থাকবে কবে কোন খেলা। লিগ করা, মাঠে খেলা রাখা এগুলোই আমরা বাফুফের নতুন সভাপতির আমাদের চাওয়া।’
গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ ৮ গোল করা ও টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হওয়া সাবিনা এবারে তেমন পারফরমেন্স করতে পারেননি। এর কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ আমার যা প্রয়োজন, তা না দিলে আমার কাছ থেকে তো ফলাফল পাবেন না। আমরা চাই, মাঠে ম্যাচ রাখতে হবে। বছর জুড়েই যদি আপনি আমাকে ক্যাম্পে রাখেন, ম্যাচ না দেন, আর এক -দুই বছর পর যদি কোনো টুর্নামেন্টের আগে বলেন, “সাবিনা ১০ গোল করতে হবে তোমাকে এবার”; সেটা অসম্ভব। ফলে মেয়েদের নিয়ে মন্তব্য করার আগে ভাবা উচিত, মেয়েদের প্রাপ্যটা দিচ্ছেন কি-না।’
নারী ফুটবলাররা নিয়মিত বেতন পান না। এখনও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের বেতন বাকি তাঁদের। এ সম্পর্কে সাফ জয়ী অধিনায়ক বলেন, ‘বেতন ঠিকই দেয়। তবে ২/৩ মাস গ্যাপ পড়ে যায়। তবে আমরা চায়না গতবারের মত ৯ মাস খেলা বিহীন থাকতে।’
আরও পড়ুনঃ যে কারণে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ বাছাই দলে থাকছেন না নেইমার
ক্রিফোস্পোর্টস/২ নভেম্বর ২৪/এইচআই